সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ একটি ছোট দ্বীপ। ৮ বর্গ কিলোমিটার এই ছোট দ্বীপটি। ৭০০০ এর বেশি মানুষ বসবাস করে। এক হিসেব মতে এখানে এখনো দেড় লাখের মতো নারিকেল গাছ আছে। এই দ্বীপে রয়েছে লাল কাঁকড়া শামুক ঝিনুকের সমারহ, এই দ্বীপের মূল আকর্ষণ হচ্ছে নীল স্বচ্ছ পানির জলরাশি, যতদূর চোখ যায় শুধু নীল জলরাশি, নীল স্বচ্ছ জলরাশির কারণে এখানে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। গবেষকদের মতে এখানে প্রায় ২৫০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এই দ্বীপে জলপাই রংয়ের কচ্ছপ দেখতে পাওয়া যায়, যা অনেক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। দ্বীপে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রবাল, এখানে প্রায় ৬৬ প্রজাতি প্রবাল রয়েছে, নীল জলরাশি আর প্রবলের কারণে এখানকার সুন্দর্য বহুগুনে ফুটে উঠেছে। তাই প্রতি বছর বহু পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে এখানে প্রায় প্রতিদিন 10000 লোক ঘুরতে আসে। এই দ্বীপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় বাংলাদেশে স্বনামধন্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ। এখানে একটি নিজস্ব বাড়ি তৈরি করেন, যার নাম দেন সমুদ্র বিলাস। টেকনাফ থেকে যখন জাহাজে করে দ্বীপে আসা হয়, তখন জাহাজের পিছনের নীল জলরাশি আর গাংচিলের আনাগোনা মন কেড়ে নেয়। সেন্টমার্টিন থাইল্যান্ড প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার, এর সৌন্দর্যের বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
সেন্টমার্টিন অবস্থান:
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে বঙ্গোপ সাগরের উত্তর পূর্বাংশে ছোট একটি প্রবাল দ্বীপ যা সেন্টমার্টিন দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। এই সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি নারিকেল জিনজিরা আবার দারচিনির দ্বীপ নামেও পরিচিত। এই দ্বীপটি কক্সবাজারের টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। দ্বীপটির আয়তন হচ্ছে ৮ বর্গ কিলোমিটার। উত্তর দক্ষিণে প্রায় ৫. ৬৩ কিলোমিটার লম্বা আর প্রস্থ কোথায় ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার কম বেশি হতে পারে।
সেন্টমার্টিনের ইতিহাস:
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসক কর্তৃকক যে জরিপ পরিচালনা করা হয়। তাতে দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। উক্ত জরিপে স্থানীয় নামের পরিবর্তে খ্রিস্টান সাধু মার্টিনের নামে এর নামকরণ করা হয় সেন্টমার্টিন । তবে চট্টগ্রাম বিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এর মতে যেহেতু কোন খ্রিস্টান বা সাধু নেই সেহেতু সাধুর নামে নামকরণ সঠিক কথা নয়। তৎকালীন চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসকের নাম ছিল মার্টিন, তাই জেলা প্রশাসক মার্টিনের নামেই দ্বীপটির নামকরণ করা হয় সেন্টমার্টিন । এই নামই ধীরে ধীরে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে ।
নারিকেল জিনজিরা নামের গল্প:
আর বণিকেরা যখন বাণিজ্যের উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য কিছু সময় অবস্থান করত। এই আরব বণিকরা এর নাম দিয়েছিল জিনজিরা। পরে যখন বাঙালি এবং রাখাইনরা এই দ্বীপে বসতি স্থাপন করে। তখন তাদের খাবার পানির খুব কষ্ট হয়, তখন তারা এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ রোপন করে, কাল ক্রমে এই দ্বীপের নাম হয় নারিকেল জিনজিরা।
দারচিনি দ্বীপ নামের গল্প:
লোকমুখের কথা অনেক বছর আগের আরব বণিকদের দারচিনি বোঝাই একটি জাহাজ পানির নিচে থাকা পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। তারপর জাহাজে থাকা দারচিনি গুলো এই দ্বীপটিতে সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে। তাই সেন্টমার্টিনের নাম হয় দারচিনি দ্বীপ। এই দ্বীপটিকে কেন্দ্র করে একটি বাংলা সিনেমা তৈরি করা হয়েছে, হুমায়ূন আহআহাম্মদের লেখা ও তৌকির আহমেদ পরিচালনায় সিনেমাটির নাম হচ্ছে দারচিনির দ্বীপ।দারচিনি দ্বীপের ভ্রমণ কাহিনী সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে যা মানুষের মনকে করেছে আকৃষ্ট। এই সিনেমাটি দেখার পর মানুষের মধ্যে হু হু করে দারচিনি দ্বীপের পরিচিতি বেড়ে যায়।দারচিনি দ্বীপ সিনেমাটির কারণে মানুষের মধ্যে সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগ্রহ বাড়ে। তাই প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় জমায়।
সেন্টমার্টিনের ছেড়া দ্বীপ:
বাংলাদেশের সর্বশেষ দক্ষিণের ভূখণ্ড হচ্ছে ছেড়া দ্বীপ। যা স্থানীয়দের কাছে ছেড়া দ্বীপ নামে পরিচিত। এই দ্বীপটি সেন্টমার্টিন থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দ্বীপটির নীলজল প্রবাল ঝিনুক শামুকে সমৃদ্ধ। দ্বীপটিতে এখনো কোন বসতি ঘরে ওঠেনি। জোয়ারের সময় দ্বীপটি অধিকাংশই পানিতে ডুবে যায়। তাই দ্বীপে যাওয়ার উত্তম সময় যখন ভাটা থাকে তখন, ভাটার সময় পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেল বা সাইকেল করে ও এই দ্বীপে যাওয়া যায়। আবার সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট থেকে স্পিড বোট ৭ ট্রলারে করেও যাওয়া যায়। আমি মনে করি সেন্টমার্টিন যাওয়া হলে অবশ্যই একবার ছেড়া দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া উচিত।
সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়:
সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম কক্সবাজার থেকে বাসে করে প্রথমে টেকনাফ যেতে হবে। তারপর টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যেতে হবে। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে সব সময়ই টেকনাফের বাস পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে টেকনাফগামী কিছু বাসের নাম উল্লেখ করা হলো:
এসি বাস এর নাম:
সেন্টমার্টিন পরিবহন
- ভাড়া: ১৮০০ টাকা
- ফোন নম্বর: ০১৯৫৭৩৪৫৪৩১
টিয়ার টি আর ট্রাভেলস
- ভাড়া ১৭০০ টাকা
- ফোন নম্বর ০১৩১৭৪৭৯১৪২
নন এসি বাস এর নাম:
হানিফ পরিবহন
- ভাড়া ১২০০থেকে ১৩০০টাকা
শ্যামলী পরিবহন
- ভাড়া ১২০০থেকে ১৩০০টাকা
গ্রিন সেন্ট মার্টিন
- ভাড়া১৪০০ থেকে২২০০ টাকা
গ্রীন লাইন
- ভাড়া ১৪০০থেকে ২২০০ টাকা
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়:
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উত্তম সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এই সময়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন অনেকগুলি জাহাজ ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের নিয়ে যাওয়া আসা করে। জাহাজের মান অনুযায়ী ভাড়া বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে ভাড়া যাই হোক না কেন টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় গাংচিল ও নীল জলরাশির মনরম দৃশ্য তা বলার মত নয়। নিম্নে কিছু টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের নাম উল্লেখ করা হলো:
কেয়ারী সিন্দবাদ
- ফোন নাম্বার:০১৮১৭১৪৮৭৩৪
এম ভি ফারহান
- ফোন নাম্বার :০১৮৪৪৫৮২৮৭২
আটলান্টিক
- ফোন নাম্বার: ০১৭৮৪৬০৭০৫০
কেয়ারি কবুজ এন্ড ডাইং
- ফোন নাম্বার: ০১৮১৯৩৭৯০৮৩
এইসব জাহাজগুলোর ভাড়া 900 টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিদিন সকাল ৯:০০ টা থেকে ৯:৩০ এর মধ্যে জাহাজগুলো টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। আবার ৩:০০ থেকে ৩:৩০ এর মধ্যে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
সেন্টমার্টিন কোথায় থাকবেন:
সেন্ট মার্টিন থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্ট রয়েছে হোটেলের মান ও ধরণ অনুযায়ী দান নির্বাচিত তবে থাকার জন্য অবশ্যই দামাদামি করে নেওয়া ভালো পর্যটকদের সুবিধার জন্য নিম্নে কিছু হোটেল ও রিসোর্ট এর নাম উল্লেখ করা হলো :
মোবাইল নম্বর ০১৯১১৯২০৬৬৬
ব্লু মেরিন রিসোর্ট
মোবাইল নাম্বার: ০১৭১৩৩৯৯০০১
কোল ব্লু রিসোর্ট
মোবাইল নাম্বার:০১৭১৩১৯০০১৩
হোটেল সি ইন
মোবাইল নাম্বার: ০১৭২২১০৯৬৭০
সীমানা পেরিয়ে
মোবাইল নাম্বার: ০১৭৩১৯৬২৬৬২
সমুদ্র কুটির
মোবাইল নাম্বার: ০১৬১৬৫০৩১২৯
সেন্টমার্টিন কোথায় খাবেন:
সেন্টমার্টিন প্রায় প্রতিটা আবাসিক হোটেল গুলোতে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। ইচ্ছে করলে এগুলোতে খাওয়া যাবে। আবার বাহিরের খাবার হোটেল গুলোতে ও খাবার খাওয়া যাবে, প্রায় সব বাইরের হোটেল গুলোতে তাজা মাছ ফ্রাই বারবিকিউ পাওয়া যায়, পর্যটকদের পছন্দ অনুযায়ী খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য নিম্নে কিছু রেস্টুরেন্টের নাম উল্লেখ করা হলো:
সি ভিউ রেস্টুরেন্ট
- ফোন নাম্বার: ০১৮৩০৯৮৫৭৪০
কোরাল কিচেন
- ফোন নাম্বার: ০১৭১৭৭৫৫২৮১
হোটেল চুইজল
- ফোন নাম্বার: ০১৮৮৪১৫৪৯২৬
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ সতর্কতা:
- ছুটির দিনগুলোতে অগ্রিম হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দিতে হবে।
- মোবাইল চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক নিতে হবে।
- রাত ১২টার পরে দ্বীপে ঘোরা যাবে না।
- নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে ভ্রমণ উপযোগী।
- সাবধানে বীচে নামতে হবে কারণ প্রচুর প্রবাল রয়েছে।
আরো পড়ুন:সাজেক ভ্যালি
Leave a Reply