সুন্দরবন হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম । যা বঙ্গোপসাগরে উপকূল বর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি। বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও বরগুনা জেলার কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের ২৪ পরগনা জুড়ে অবস্থিত। উপকূলবর্তী পরিবেশের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে এই সুন্দরবন বনভূমি। এই বনভূমির আয়তন হচ্ছে ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। যা বাংলাদেশে অভ্যন্তরে রয়েছে ৬৬% (৬৫১৭বর্গ কিলোমিটার) আর ভারতের অভ্যন্তরে রয়েছে ৩৪% (৩৪৮৩ বর্গ কিলোমিটার)। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির দারা সুন্দরবন বিশ্ব দরবারে আরো বেশি পরিচিত লাভ করে।ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের অংশকে সুন্দরবন হিসেবে আর ভারতের অভ্যন্তরের অংশকে সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যর তালিকায় লিপিবদ্ধ করে। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলানিকেতন বাংলাদেশের সুন্দরবন, যা আমাদের গর্ব।
এইবনে সুন্দরী গাছের আদিক্যের কারণেই মূলত সুন্দরবন নামকরণ করা হয়। বাংলায় এই বনের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সমুদ্র উপকূলবর্তী এই বনকে অতীতে সমুদ্র বনও বলা হতো।এই অঞ্চলের আদিবাসীরা পূর্বে এই বনকে ডাকত চন্দ্রবান্ধে নামে। সাধারণত নোনা পানিতে যে উদ্ভিদ জন্মায় তাদেরকে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বলা হয়। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো জেগে থাকা শ্বাসমূল, এই শ্বাসমূলে শ্বাস ছিদ্র থাকে । এইবনে বেশিরভাগ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ থাকায় এই বনকে ম্যানগ্রোভ বন বলা হয়।
মুঘল আমলে সুন্দরবনের ইযারা লাভ করেন স্থানীয় এক রাজা। ১৭৫৭ সালে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি, মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীরের কাজ থেকে সুন্দরবনের কর্তৃত্ব লাভ করেন। পরিবর্তে ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্বাধিকার লাভ করে। তারপর ১৮২৯ সালে প্রথম সুন্দরবনের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তখনকার সময় সুন্দরবনে প্রচুর বাঘ ও হিংস্র প্রাণী থাকায় জরিপ কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ১৮৭৮ সালে সংগ্রহ সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বানাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৮৭৯ সালে সংগ্রহ সুন্দরবনের দায়িত্ব, বন বিভাগের উপর অর্পণ করা হয়।
মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের দারা সারা পৃথিবী ব্যপি বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এন্টারটিকা মহাদেশের হিমবাহু গুলো গলে গিয়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উপকূলবর্তী সুন্দরবন সহ ম্যানগ্রোভবন গুলি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে।
Word Bank এর রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে সুন্দরবন অঞ্চলের জলতল প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার করে বাড়ছে। ফলে বেডফোর্ড, লোহাচড়া, নিউমুর দ্বীপ জলের তলায় চলে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলে ১৯৫১ সালের পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা ক্রমিই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৭ এবং ২০০৯ সালে সিডর ও আইলা ঘূর্ণিঝড় এই বোনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের জমি এবং পানির লবণের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কৃষি এবং খাদ্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে মানুষের এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
সুন্দরবন অঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নদীর পানির উষ্ণতা প্রতি দশকে ০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এখানকার বাস্তুসংস্থানের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবন এলাকার কৃষি ও বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
এইবনের গাছপালার অধিকাংশই ম্যানগ্রোভ প্রজাতির এবং রয়েছে বৃক্ষ, লতা গুল্ম, ঘাস, পরগাছা, এবং আরোহী উদ্ভিদসহ নানা ধরনের উদ্ভিদ। বেশিরভাগ উদ্ভিদের রয়েছে উর্দু মুখী শ্বাসমূল, যার সাহায্য শোষণের জন্য বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করে। এ বনের প্রধান বৃক্ষরাজি হচ্ছে সুন্দরী ও গেওয়া। এইবনে ৩৩৪ টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি ফার্ন জাতীয়, ৮৭ টি একবীজপত্রী এবং অবশিষ্ট ২৩০ টি দ্বিবীজপত্রী, এছাড়াও এখানে রয়েছে, ৩৫টি সিমগোত্রীয়, ২৯ টি তৃনজাতীয়, ১৯ টি হোগলা জাতীয়, এবং ১৮টি সিজ জাতীয় উদ্ভিদ। প্রায় ৫০ টি প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে কেবল এইবনে আছে ৩৫টি প্রজাতি। এইবনে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদগুলো চিরসবুজ খাটো জাতীয় এবং লম্বা জাতীয় হয়, এরা অনেকেই দলবদ্ধভাবে জন্মায় খুলনা ও বাগেরহাট এলাকার অংশে বেশি লবণাক্ত হওয়ায় এখানে সুন্দরী গাছে আধিক্য বেশি। প্রায় সব খালের পারে জন্মে নিপা পাম বা গোলপাতা, এ বনে জন্মে বাই, কেওরা, খুনসি, আরালি আরও নানা ধরনের উদ্ভিদ।
বাংলাদেশের মধ্যে এইবনই হচ্ছে বন্য প্রাণীর জন্য সবচেয়ে বড় আবাসস্থল। এখানে ৩৭৫ প্রজাতির অধিক বন্যপ্রাণী বাস করে যার মধ্য ৩৫ প্রজাতির সরিসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী অন্তর্ভুক্ত, 291 প্রজাতির মধ্যে ২১০ প্রজাতি হচ্ছে সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাকড়া,৭৩ প্রজাতির মালস্কা ও ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী বাস করে। সুন্দরবনে অবাধে ছুটে চলে হরিণের দল। বানরের নিজেদের মতো খুনসুটি আর অভিমান নিয়ে বসবাস করে এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার কেমন যেন দখলদারের মত পদচারণা করে। যারা উদ্ভিদ ও প্রাণ নিয়ে গবেষণা করে তাদের কাছে এইবন যেন স্বর্গ রাজ্য।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের দেশের জাতীয় পশু। এর গায়ে লালচে বর্ণের উপর কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে।এছাড়া এই বাঘের রয়েছে রাজকীয় চলন ও খীপ্র গতি, এইবনের প্রায় সব জায়গাতেই এর চলাফেরা লক্ষ্য করা যায়। কখনো সে গভীর অরণ্য লুকিয়ে থাকে, কখনো আবার খালের পাড়ে গোল পাতার নিচে আয়েশী ভঙ্গিমায় শুয়ে থাকে, কখনো কখনো আবার খাল বা নদী সাতরিয়ে সৈকত পাড়ি দিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিমায় হেঁটে চলে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এই অবাধ বিচরণের জন্য অবৈধ স্বীকারীরা বনের সম্পদ নষ্ট করতে ভয় পায়। তাই বাঘকে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষকও বলা হয়।১৯৩০ সালে দেশের ১১ টি জেলায় বাঘছিল। এখন শুধু এইবনে বাঘের পদচারণা দেখা যায়। ২০০০ সালে বনবিভাগ ও UNDP এর হিসেবে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০ টি। ২০১৪ সালের শুমারি তে ১০৬ টি এবং ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১০৬ টি হয়েছে।
এইবনে কথা মনে হলেই এই বনের হরিণের কথা মনে পড়ে যায়। অপরূপ সুন্দর এই হরিণের টানা টানা চোখ, মায়াবী চাহনি, মানুষের মন কেড়ে নেয়। হরিণীরা নিশাচর বা দিবা চর ঘাস, লতাপাতা খেয়ে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। এরা ছোট ছোট দলে বাস করে। ৭-৮ মাস পর গর্ভধারণের পর ২টি করে বাচ্চা দেয়। দেশে হরিণের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। বছরের প্রায় ১০ থেকে ১২হাজার হরিণ শিকার করা হয়।
এইবনের আজব প্রাণী বানর কখন এ গাছে আবার কখনো ও গাছে লাফালাফি করে। বুদ্ধিতে খুব দ্রুত প্রাণী বানর প্রায় মানুষের কাছাকাছি। এরা গাছে ফল, ফুল খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা দলবদ্ধ হয়ে বেশির ভাগ চলাফেরা করে। গাছের মগডালে ঝুলে থাকা বানর দেখতে ভারী মজা লাগে।
এইবনের সাধারণত লোনা পানিতে কুমির দেখা যায়। এ কুমির প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। সুন্দরবনের যেসব স্থানে সাধারণ কুমির দেখা যায় নন্দবালা খাল, পশুর নদীর চর, ছেলাগাং ঝোমরা খাল, শাপলা খাল, ভদ্রগং, মোরা ভোলা নদী, প্রভুতি। সুন্দরবনের কুমির দেখার উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল এ সময় এরা নদীর চর বা খালের পারে রোদ শোষণ করে। লোনা পানির কুমির একমাত্র এইবনে দেখা যায়। এইবনে বর্তমানে ১৫০ থেকে ২০০ টি কুমির রয়েছে।
সুন্দরবনের মধু খোজা আর বাঘ খোঁজা সমান কথা। কারণ দুটোই থাকে গভীর জঙ্গলে, মৌমাছিরা মৌচাকে মধু সংগ্রহ করে, আর এক দল মৌয়ালরা তা আহরণ করে। দেশের উৎপাদিত মোট মধুর ২০ শতাংশ সুন্দর বনে পাওয়া যায়। সুন্দর বনের সবচেয়ে ভালো মধু হচ্ছে খুলশী ফুলের পদ্ম মধু।
দুবলার চর এইবনে দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত।দুবলার চরের মোট আয়তন৮১ বর্গমাইল। এই চর মূলত জেলে গ্রাম নামে পরিচিত এখানে মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুটকি বানানোর কাজ। বর্ষ মৌসুমে ইলিশ ধরার শেষে বহু জেলে এখানে এসে সাময়িক বসতি তৈরি করে এবং শুটকি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই চরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস মেলা প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এখানে রাস মেলা সম্পাদিত হয়। যার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে হিন্দু ধর্মের লোক ভিড় জমায়। আর এই রাস মেলা চলে আসছে প্রায় 200 বছর ধরে। এই রাস মেলার সময় দুবলার চর খুব ব্যস্ত হয়ে পরে। এখানে পশুপাখির মধ্য রয়েছে মাছরাঙ্গা, মদনটাক পাখি ও হরিণের বিচরণ। এখানে একপাশে সুন্দরবন অন্য পাশে বঙ্গোপসাগর, স্থানটিকে করেছে আকর্ষণীয়। তাই প্রকৃতির প্রেমে পাগল হওয়ার জন্য দুবলুর চর যাওয়া উচিত।
এইবনে একটি দৃষ্টি নন্দন অভয়ারণ্য দর্শনীয় স্থান হচ্ছে হিরণ পয়েন্ট। স্থানীয়দের কাছে নীলকমল হিসেবে ও পরিচিত। কুঙ্গা নদীর পশ্চিমতীরে এবং সুন্দরবনের দক্ষিণের যার অবস্থান। বাংলাদেশে অনেকগুলি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে হিরন পয়েন্ট অন্যতম। এখানে রয়েছে দেড় কিলোমিটার কাঠের তৈরি হাঁটার পথ। এই পথে হাঁটার সময় লক্ষ্য করা যায় নানা রকমের পাখি, বানর, চিত্রা হরিণ, মাঝে মাঝে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পায়ের ছাপ। হিরন পয়েন্ট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ৫০ ফুট উচ্চতা একটি ওয়াজ টাওয়ার। যার মাধ্যমে অবলোকন করা যায় হিরণ পয়েন্ট সহ এইবনে সৌন্দর্য। এই টাওয়ার থেকে কখনো কখনো দেখা পাওয়া যায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
করম জল এইবনে একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। যা পশুর নদীর তীরে অবস্থিত। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। ৩০ হেক্টর জায়গা জুড়ে এই পর্যটন কেন্দ্র টি গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র কমির প্রজনন ও হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। এইবনে অন্য কোথাও যদি হরিণের দেখা না পান তবে এখানে রয়েছে হরিণ দেখার সুব্যবস্থা। কমির প্রজনন কেন্দ্র কমিরের প্রজনন করিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করে। বিভিন্ন সাইজ গ্রেট করে রাখা হয় প্রজনন পন্ডে। যেগুলি বড় হয় সেগুলি ছেড়ে দেয়া হয় সুন্দরবনের নোনা পানিতে। করম জলের এলাকার সুন্দরবনের রয়েছে কাঠের তৈরি মালকি ট্রেইল নামের হাঁটার পথ, যা এখানকার সৌন্দর্যকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পথ দিয়ে হাঁটার সময় অবলোকন করা যায় বানরের আনাগোনা পাখিদের সমারহ রয়েছে হরিণের বিচরণ। এখানে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার যার মাধ্যমে পাখির চোখে অবলোকন করা যায় এইবনের মনোরম দৃশ্য। এইবনে ভ্রমণে যাবেন অথচ করম জলে যাবেন না তা কখনো হতে পারে না।
মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ কটকা সমুদ্র সৈকত। বেশ নির্জন ও পরিছন্ন পরিবেশে সৌন্দর্যের মাধুর্য রয়েছে এখানকার আবহাওয়ায়। কটকাতে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ারে উঠে আসেপাশের রূপ লাবণ্য উপভোগ করার মতো। এই ওয়াচ টাওয়ারের খানিকটা উত্তরই রয়েছে কটকা সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতে সাগরের ঢেউয়ের আকার অত্যন্ত পরিবর্ধন ও পরিবর্তনশীল। এখানকার পরিবেশ নির্জন হওয়ায় মাঝে মাঝে বাঘের পায়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। এখানে রয়েছে হরেক রকম হরিণের বিচরণ, সব মিলিয়ে মনোরম পরিবেশ।
সুন্দরবনের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে হারবার হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। এর দূরত্ব মংলা থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার। এই পর্যটন স্থানের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার ও কাঠের ট্রেইল। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে এক নজরে এইবনের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার মত। কাঠের ট্রেইলে হাঁটার সময় নিজেকে হারিয়ে ফেলা যায় অজানার রাজ্যে। পুরো ট্রেইল টা ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। গভীর জঙ্গলে বনের মধ্যে ট্রেইলে হাঁটার সময় মনের মধ্যে একটু ভয় ভয় কাজ করে। এখানে বন বিভাগের একটি অফিস রয়েছে। বিরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের স্মরণে এখানে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে।
কটকার কাছেই জামতলা সমুদ্র সৈকত। কটকা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনের এই স্থানটিতে প্রচুর জামগাছ থাকায় এখানকার নাম হয়েছে জামতলা সমুদ্র সৈকত। এখানে সুন্দরী, গাওয়া, গড়ান, সংমিশ্রণ রয়েছে। লক্ষ্য করা যায় হরিণের ছোটা ছুটি, কখনো কখনো বাঘের পায়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। সবমিলিয়ে মোটামুটি উপভোগ করার মত জায়গা।
মান্দার বাড়িয়া সমুদ্র সৈকতটি একটি অপরিচিত সমুদ্র সৈকত হিসেবে বিবেচিত, কারণ প্রচার-প্রচারণার অভাবে মানুষের কাছে খুব একটা পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। তাই এখানকার সুন্দর্যের রহস্য অজানা রয়ে গেছে। এখানে যেতে হলে সাতক্ষীরা হয়ে এইবনে যেতে হবে। তবে দেখা পাওয়া যাবে অজানা মান্দার বাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।
এইবনে যেতে হলে প্রথমে খুলনা হয়ে মংলা যেতে হবে। সেখান থেকে লঞ্চ অথবা ট্রলারে করে এইবনে যেতে হবে। ঢাকা থেকে খুলনা সড়ক অথবা রেল উভয় পথে ব্যবহার করা যেতে পারে। সড়ক পথে ঢাকা থেকে খুলনা আসার জন্য ঢাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে খুলনার উদ্দেশ্য বাস ছেড়ে যায়, সেই বাসে উঠতে হবে। আর রেল পথে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে খুলনা গামী ট্রেনে উঠতে হবে। তারপর খুলনা থেকে মংলা হয়ে এইবনে যেতে হবে। তবে ৩থেকে ৪দিনের ভ্রমণের জন্য খুলনাতে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। তারা নিজেদের তত্ত্বাবধানে পর্যটকদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন নিম্নে কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি নাম উল্লেখ করা হলো
সুন্দরবনের লঞ্চ ভ্রমণে, লঞ্চে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও যদি ব্যক্তিগত ভাবে ভ্রমনে যান তাহলে এইবনে বন বিভাগের অধীনের বিভিন্ন পয়েন্ট রেস্ট হাউস রয়েছে। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সেই রেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন:ঝুলন্ত সেতু
বোটানিক্যাল গার্ডেন সবুজের আচ্ছাদন আর নির্মল বাতাসের শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসেবে পরিচিত । ময়মনসিংহ জেলার…
মালনি ছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম চা বাগান।…
সাগর কন্যা দ্বীপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত এই জেলা নাম ছিল দক্ষিণ…
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি প্রত্নতবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। যেটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ত্ত্ব সংগ্রহে…
প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক সবাই একটু কম বেশি চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের পাট এর খোঁজ…
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে…