Chattogram

সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley)- সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড়

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান। সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপর লীলাভূমি এটি, এটিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়।এখান থেকে পুরো রাঙামাটি অবলোকন করা যায়। সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রং বদলায়, চারদিকে সবুজে সমরহ, চারপাশে সমুদ্রের ঢেঙের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি সারি, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, আর তুলোর মত মেঘ।সাজেকের রুপের তুলনা হয়না। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। এগুলোর জন্য এখানকার সৌন্দর্য বহু গুণে ফুটে উঠেছে। এখানে রূপের মাধুর্য সবসময় অটুট থাকে।সাজেক ভ্যালি যেতে হলে আগে খাগড়াছড়ি জেলায় আসতে হয়, সেখান থেকে সাজেক যেতে হয়। এটি বর্তমান সময়ের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দেশি  বিদেশে পর্যটকদের কাছে। তাই প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায়। 

সাজেকের অবস্থান

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগধু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম এবং পশ্চিমে খাগড়াছড়ি দিঘীনালা। সাজেকের মোট আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৮০০ ফুট। খাগড়াছড়ি জেলা থেকে  সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার আর দীঘিনালা থেকে ৪৯কিলোমিটার।সাজেক বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে।

সাজকের ইতিহাস

সাজেক রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়া এই দুটি পাহাড় সমন্বয় গঠিত। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাহাড়।এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট, আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়। সাজকের কলা ও কমলা বেশ বিখ্যাত। সাজেক মূলত লুসাই পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে।

সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান গুলো হচ্ছে

রুইলুই পাড়া

রুইলুই পাড়ার পাহাড় থেকে ভারত দেখতে পাবেন। উঁচু নিচু অনেক পাহাড় রয়েছে। আপনার মনে হবে, যে এখন আকাশের মধ্যে উড়ে বেড়াচ্ছি, পাহাড়ের উপর দিয়ে খন্ড খন্ড মেঘ উড়ে যাচ্ছে, ক্ষণিক ক্ষণিক মনে হবে মেঘ ভাসে না আমরা ভাসি। আমরাই মনে হয়, সাদা মেঘের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছি। এই জায়গাটিতে খুব সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। থাকার মত খুবই ভালো জায়গা আছে এবং খাবারের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সাজেক ইউনিয়নের ভিতরে এই গ্রামটি অবস্থিত। সাজেক ভ্যালি যদি যেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই রুইলুই পাড়া গিয়ে সময় কাটাতে পারেন।

স্টোন গার্ডেন

সাজেকের মূল গেট দিয়ে ঢুকে একটু সামনে যেতে দেখা যায় স্টোন গার্ডেন। এই গার্ডেনটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও খোলামেলা জায়গা। এই গার্ডেনটিতে ঢুকতে টিকিটের মূল্য দিতে হবে মাত্র ২০ টাকা। ছবি তোলার জন্য খুবই সুন্দর একটা জায়গা। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এর অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সময় কাটানোর খুবই ভালো একটা জায়গা। সাজেক ভ্যালি যদি যেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই স্টোন গার্ডেন যেতে পারেন।

লুসাই গ্রাম

লুসাই গ্রাম সাজেক ভ্যালির একটি ঐতিহাসিক গ্রাম। যদি সাজেক ভ্যালি যেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই গ্রামে যাবেন।পাহাড়ের উপরে লুসাই গ্রাম অবস্থিত।সাজেক ভ্যালির মধ্য যে ট্রি  হাউস রয়েছে তা শুধু এই গ্রামটিতে পাওয়া যায়। সাজেক ভ্যালির যে গ্রামগুলো রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রাম এটি। এই গ্রামের যে সংস্কৃতি রয়েছে তা এখনো পালন করা হয়। 

কংলাক পাহাড়

সাজেক ভ্যালির সবচেয়ে উঁচু পাহাড় কংলাক পাহাড়।এই পাহাড়ের উচ্চতা ১৮০০ ফুট। এই পাহাড়টির সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইছড়ি গ্রামের কংলাক পাড়ায় অবস্থিত। এই পাহাড়টিতে রয়েছে একটি ঝর্ণা। ঝর্ণাটির নাম হচ্ছে কংলাক ঝর্ণা।এই পাহাড়ে রয়েছে জুম চাষে বিখ্যাত ও এটি উপার্জনের উৎস। চারদিকে রয়েছে পাহাড় আর সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলার মত একটি পরিবেশ সাজেক ভ্যালি গেলে অবশ্যই কংলাক পাহাড় যাবেন।

সাজেক ভ্রমণের পযুক্ত সময়

সারা বছরই সাজেক ভ্রমণ করা যায়।সাজেকের রূপের কোন তুলনা হয় না। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। তবে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে যাওয়া উত্তম। কারণ এই সময় সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তবে সতর্কতার খাতিরে বলছি, শুধুমাত্র ভরা বর্ষায়  পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণ না করাই ভালো। কারণ বর্ষা ঋতুতে রাস্তায় পাহাড়ি ধস নামতে পারে।

সাজেক যাওয়ার উপায়(How to go sajek)

যেহেতু সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত। তাই সাজেক আসতে চাইলে নিজ জেলা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি বা খাগড়াছড়ি আসতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে সাজেক।সাজেক রাঙ্গামাটি  জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে সুবিধা কারণ। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। পর্যটকরা রাঙ্গামাটি জেলা হয়ে না গিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে সাজেক যেতে পছন্দ করে। সেখান থেকে সাজেক যায় পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি

প্রথমে ঢাকা থেকে খারাপ খাগড়াছড়ি আসতে হবে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি কিছু বাসের তালিকা

 শ্যামলী পরিবহন

 আরামবাগ

ফোন নাম্বার:০২৭১৯৪২৯১

 কমলপুর

ফোন নাম্বার: ০২৮৩১৬২৪৬

 পান্থপথ

ফোন নাম্বার:০২৯১০২০৮২ 

 গাবতলী

ফোন নাম্বার :০২২০১৬২২০৫৮০০

গ্রীন লাইন পরিবহন

 বাড্ডা 

ফোন নাম্বার:০১৯৭৭০০৬০০৭৬

রাজার বাগ

ফোন নাম্বার:০২৯৩৪২৫৮০

নর্দা 

ফোন নাম্বার:০১৭৩০০৬০০৯৮

আরামবাগ 

ফোন নাম্বার:০২৯৩৪২৫৮০

হানিফ এন্টারপ্রাইজ

 কল্যাণপুর

ফোন নাম্বার:০১৭১৩০৪৯৫৪০

নর্দা

ফোন নাম্বার:০১৭১৩০৪৯৫৭৯

 সায়দাবাদ 

ফোন নাম্বার:০১৭১৩৪০২৬৭৩

 সাভার

ফোন নাম্বার:০১৭৫৩৪৮৮৮৭৬

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক কিভাবে যাবেন

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে হলে আপনাদের প্রথমে দিঘীনালা আসতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার আর খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। দীঘিনালা একটি সেনাবাহিনীর এসকোটার রয়েছে। সাজেক যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে সেনাবাহিনীর এসকোট দিনে দুইবার পাওয়া যায়। সকাল ৯ঃ৩০  একবার আবার ২:৩০ মিনিটে একবার দুইটা ৩০ মিনিটে একবার তাই সকালে গেলে ৯ টা থেকে ৯:৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছতে হবে। সকালের এসকোটার মিস করলে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর বিকেলের টা মিস করলে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘন্টা।

সাজেক গিয়ে কোথায় থাকবেন (Sajek Hotel/Hotels)

সাজেক পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায়  ভ্রমণকারীদের থাকার জন্য সেখানে অনেকগুলি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। সাজেক সেনাবাহিনীর তিনটি রিসোর্ট রয়েছে সেখানে বেসরকারিভাবে প্রায় 1০০টির মত রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। ছুটির দিনে ভ্রমণ করতে গেলে আগে থেকেই রুম বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। তা না হলে ভালো রুম পাওয়া যায় না। এক রাতে ১৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া লাগবে। কম খরচে থাকতে চাইলে আদিবাসী ঘর গুলোতে থাকতে পারেন। এসব ঘরগুলোতে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায় থাকা যায় তবে কাপলদের জন্য এই ঘর আদর্শ নয়, সাজেক থাকার জন্য যে হোটেল গুলো রয়েছে তার তালিকা হল: 

নীল পাহাড়ি ইকো রিসোর্ট 

ফোন নাম্বার:০১৬২৫৩২৬১৫৬ 

সাজেক ক্লাসিক রিসোর্ট

ফোন নাম্বার:০১৬৪৭৫৪৪১৯ 

 মেঘ রোদ্দুর হিল রিসোর্ট 

ফোন নাম্বার:০১৫১১৬৭০০৬৮ 

 মনগড় রিসোর্ট সাজেক

ফোন নাম্বার:০১৮৪৪২১৭৩১০ 

 রিলাক্স সাজেক রিসোর্ট

ফোন নাম্বার:০১৮৭৩২৪৯৪৭০  

ডোরেন সাজেক হোটেল এন্ড রিসোর্ট

 ফোন নাম্বার:০১৮৪৪১১৪৮৩৪ 

সাজেক গিয়ে কোথায় খাবেন

সাজেকে সব রিসোটেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। তবে আগে থেকেই খাবার অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে খাবার পেতে সমস্যা হতে পারে। কম খরচে আদিবাসী ঘরেও খাওয়া যায়। নিচে কিছু খাবার রেস্টুরেন্ট এর তালিকা দেওয়া হলো: 

মনটা না রেস্টুরেন্ট

 ফোন নাম্বার: ০১৮৭৯০৩৬৮০৮

বিসমিল্লাহ রেষ্টুরেন্ট

 ফোন নাম্বার:০১৮৪৬৫৩৪৭৮২ 

চিম্বল রেস্তোরা

ফোন নাম্বার:০১৬৩৯৭০০১৪১ 

কাশবন রেস্টুরেন্ট

ফোন নাম্বার:০১৬৪৮৬৭৬৫৫ 

সাজেক ভ্রমণ সতর্কতা

 সাজেক রবি এয়ারটেল ও টেলিটক এ নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।

 সাজেক অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই সোলার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

মোবাইল চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক নিতে হবে।

 ছুটির দিনগুলোতে অগ্রিম হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দিতে হবে।

 সাজেক যাওয়ার পথে অনেক আঁকাবাঁকা ও উচু উঁচু নিচু তাই এই পথ বিপদজনক, তাই গাড়ির ছাদে ভ্রমণের সতর্ক থাকুন।

আরো পড়ুন:সেন্টমার্টিন দ্বীপ 

Shahana

Recent Posts

বোটানিক্যাল গার্ডেন( Botanical Garden) –  ময়মনসিংহ

বোটানিক্যাল গার্ডেন সবুজের আচ্ছাদন আর নির্মল বাতাসের শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসেবে পরিচিত । ময়মনসিংহ জেলার…

55 years ago

মালনি ছাড়া চা বাগান (Malnicherra Tea Garden) –  বাংলাদেশের প্রথম ও বৃহত্তম চা বাগান

মালনি ছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম চা বাগান।…

55 years ago

সাগর কন্যা দ্বীপ – জেলা ভোলা ভ্রমণ

সাগর কন্যা দ্বীপ  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ।  বরিশাল  বিভাগের অন্তর্গত এই জেলা নাম ছিল দক্ষিণ…

55 years ago

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (varendra Research Musem) – বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি প্রত্নতবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। যেটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ত্ত্ব সংগ্রহে…

55 years ago

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক (Proyash Sena Binodon Park) – রংপুরে বিনোদন পার্ক

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক সবাই একটু কম বেশি চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের পাট এর খোঁজ…

55 years ago

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকা মিরপুর(Bangladesh National Zoo) – ঢাকা মিরপুর

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত।  চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে…

55 years ago