ষাট গম্বুজ মসজিদ বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম, যা বাংলাদেশের খুলনার বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। খানজাহান আলী মসজিদটি জেলা শহর থেকে প্রায় ৩কিলোমিটার পশ্চিমে প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটি সংগ্রহ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের ইসলামিক স্মৃতি বহন করে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরে দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলোর পুরত্ব প্রায় ৮ থেকে ৫ ফুট। মসজিদটি পূর্ব দেয়ালেম ১১ টি বেশ বড় আকারে খিলান যুক্ত দরজা রয়েছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে আকারে বড় হবে। উত্তর এবং দক্ষিণ পাশে আছে আরো সাতটি দরজা। মসজিদের চারকোণে রয়েছে চারটি মিনার, এদের আকার গোলাকার এবং উপরের দিকে শুরু আকৃতি মিনার গুলোর উচ্চতা তাদের কার্নিশের থেকে বেশি। সামনের দুটিতে দুটি প্যাচানোর আকৃতির সিঁড়ি রয়েছে। এদের একটি নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্দার কুঠা। মসজিদের ভিতরে ৬০ টি পিলার বা স্তম্ভ রয়েছে। এদের প্রতিটি পাথর কেটে বানানো হয়েছে, শুধু পাঁচটি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। মসজিদটি নাম ষাট গম্বুজ (৬০গম্বুজ ) কারণ এখানে সাতটির বেশি স্তম্ভ রয়েছে। এখানে ১১টি শাড়িতে মোট ৭৭ টি গম্বুজ রয়েছে। এদের মধ্য সাতটি গম্বুজ দেখতে অনেকটা চৌচালা ঘরের মতো, বাকি সাতটি আধা গোলাকার। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীন এ মসজিদটি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য (World Heritage Sites)হিসেবে মর্যাদা দেয়। আর এর ফলশ্রুতিতে এটি বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভ করে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস
পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় হযরত খানজাহান আলী খুলনার বাগেরহাট জেলা একটি মুসলিম উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মূলত বাংলা এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্য। এ সময় তিনি বহু মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ধারণা করা হয় এই মসজিদটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় 1442 সালে, আর শেষ হয় 1499 সালে। এই মসজিদটি নির্মাণে বহু অর্থ খরচ করতে হয়। এই পাথরগুলো আনা হয় চট্টগ্রাম এবং রাজমহল থেকে। অনেকের ধারণা হযরত খানজাহান আলী অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে নদীর পানিতে ভাসিয়ে পাথরগুলি এনেছিলেন।
মসজিদ প্রাঙ্গনে দেখার মত যা আছে
ঘোড়া দিঘী
হযরত খানজাহান আলী এখানকার মানুষের সুপেয় পানির অভাব পূরণের জন্য একটি দিঘী খনন করেন। এই দিঘীটি তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে পরিদর্শন করতেন বলে এর নাম হয় ঘোড়া দিঘী। আবার কারো মতে খান জাহান আলী দিঘী কতদূর খনন করবেন তার জন্য ঘোড়া ছেড়ে দেন এবং ঘোড়া দৌড়ে গিয়ে যেখানে থামে ততখানি দিঘী খনন করুন তাই এর নাম হয় গোড়া দিঘী।
জাদুঘর
জাদুঘরটির ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ পূর্ব কর্নারে অবস্থিত। ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কোর তহবিলের সাহায্য খান জাহান আলীর কৃতিত্ব সংরক্ষণ মুসলিম সংস্কৃতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণের জন্য এই জাদুঘরটি নির্মিত হয়েছে। এখানে প্রাচীন ইসলামী সংস্কৃতির বহু নিদর্শন রয়েছে। এখানে পুরো বাগেরহাট জেলার সংগৃহীত স্থান নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়েছে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ এর অবস্থান (shat Gombuj Mosque Location)
ষাট গম্বুজ মসজিদ টি বাগেরহাট জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। হযরত খানজাহান আলী কর্তৃক এই বিশাল আয়তন মসজিদটি দরগা হতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাগেরহাটের দূরত্ব প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার। ষাট গম্বুজ মসজিদটি বাগেরহাট জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বাগেরহাটে আসতে পারেন। বর্তমান ঢাকা থেকে বাগেরহাটে অনেক বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। কিছু বাস সার্ভিস এর নাম দেওয়া হল :
হানিফ পরিবহন
- গাবতলী – ০২-৯০১২৯০২
- সায়দাবাদ- ০১৭১৩৪০২৬৭৩
- ভাড়া – ৫৫০ টাকা
সাকুরা পরিবহন
- গাবতলী – ০১৭১২৯৩৪৩০
- সায়দাবাদ – ০১৭১৪০৪০২২১
- ভাড়া – ৫৫০ টাকা
সোহাগ পরিবহন
- গাবতলী – ০১৭১৮৬৭৯৩০২
- ভাড়া – ৫০০ টাকা
পর্যটন পরিবহন
- সায়দাবাদ – ০১৭১১১৩১০৭৮
- ভাড়া – ৫০০ টাকা
কোথায় থাকবেন
বাগেরহাটে থাকার জন্য বড় ছোট অনেক হোটেল রয়েছে। বাজেট অনুযায়ী আপনি আপনার পছন্দমত হোটেলে থাকতে পারেন। কিছু হোটেলের নাম দেওয়া হলোঃ
- সার্কিট হাউস, বাগেরহাট – ০১৭৩৩৬০২০৭
- হোটেল প্যারাডাইস ভিউ, বাগেরহাট – ০১৭১৭০৯৮১৫৪
- হোটেল মোহনা,বাগেরহাট – ০১৭১৭০৯৮১৫৪
- জারিফ হোটেল,খান জাহান আলী মোর,বাগেরহাট – ০১৭৫৩৫৯৮৩০০
কোথায় খাবেন
খাওয়ার জন্য বাগেরহাটে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে কিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এর নাম দেওয়া হলঃ
- ব্ল্যাক চেরি, বাগেরহাট – ০১৬৭১৫৩৮২৮২
- ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্ট, এন্ড হোটেল, বাগেরহাট – ০১৭১১৫৭৫০৯৫
- ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট, বাগেরহাট – ০১৭৪৭৬৬৯২৬৬
- ক্যাশেল আশহারা, খানজাহান আলী রোড – ০১৭২৬৫৩৬৩৭৬
- রিভার ভিউ ফুড কোট, পৌর পার্ক, বাগেরহাট – ০১৯৬৫৪৩৪৪৩২
টিকিট মূল্য
ষাট গম্বুজ মসজিদে বিদেশিদের ভ্রমণের জন্য প্রতিজনের মূল্য ২০০ টাকা। আর বাংলাদেশীদের ভ্রমণের জন্য প্রতি জনের মূল্য ২০ টাকা। তবে, পাঁচ বছরের কম বয়সীদের প্রবেশ মূল্য ফ্রী।
খোলা ও বন্ধের সময়সূচী
গ্রীষ্মকাল
সকাল ১০ থেকে বিকাল ৬ পর্যন্ত খোলা থাকে। বিরতি ১ থেকে ১ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
শীতকাল
সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত খোলা থাকে। বিরতি ১ থেকে .১ঃ৩০মিনিট পর্যন্ত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য .১২ঃ৩০থেকে ৩ পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
আরো পড়ুনঃ আহসান মঞ্জিল
Leave a Reply