শিল্পচার্জ জয়নুল আবেদীন পার্ক ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা পুরাতন ব্রক্ষপুত্র। নদীর তীরে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়। একটি শহরের ভিতর এরকম একটি পার্ক পুরো শহরবাসীকে যেমন ফ্রেশ রাখতে সাহায্য করে তেমনি এখানে আগত দর্শনার্থীদের পার্কটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অন্যদিকে ঘিরে মানুষের কর্ম ব্যস্ততা মাধ্যমে তাদের আকর্ষণ করে।
এ পার্কে সবচেয়ে মজার বিষয় হল অন্যান্য পার্কের মত প্রবেশ ফি দিতে হয় না। আরো একটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হল আপনি যখন ইচ্ছে আসতে পারবেন এবং ইচ্ছে মত চলে যেতে পারবেন। তার জন্য কেউ আপনাকে বাধা দিবে না। পার্কে প্রবেশের পরেই আপনি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া নদীর পাড়ে রয়েছে অসংখ্য গাছ ও তার নিচে কংক্রিটের বসার স্থান। মানসিক চিত্রের বিনোদনের জন্য পার্কটিতে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন, ফোয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকা সহ বিভিন্ন রাইড। উদ্যানের বাহিরে নাগরদোলা, চরকি, গোড়ার গাড়ি, টমটমে ঘুরে বেড়ানো সহ আরো বিভিন্ন কিছু ।
পার্কটিতে সব সময় মেলার মত পরিবেশ থাকায় আপনি চাইলে নাগর দোলায় চড়া, বেলুন সুট খেলা এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন , খেলনা কিনতে পাবেন এখানে। পুরো পার্কটিতে রয়েছে একাধিক কার আর ঘাটে আছে বাহারি ও রঙিন পাল তোলা নৌকার শাড়ি। আপনি চাইলে এগুলো ভাড়া করে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। ব্রক্ষপুত্র নদের বুকে নদীর উপর রয়েছে বেশ কিছু ফুচকার দোকান ও অনেক সুন্দর জায়গা। এছাড়াও শিল্প চার্জ জয়নুল আবেদীন পার্কের কাছে একটি বৈশাখী মঞ্চ এর ঠিক পাশে রয়েছে একটি শিশু পার্ক ও চিড়িয়াখানা।
চিড়িয়াখানা ঢুকতে হলে টিকিটের প্রয়োজন হয়। এ টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করে ডানদিকে গেলে দেখতে পারবেন অজগর সাপ, বিভিন্ন ধরনের পাখি ও খরগোশ। আর বামদিকে রয়েছে অনেকগুলো হরিণ, নাম না জানা অনেক পাখি, ময়ূর, খরগোশ, মদনটাক, হনুমান, সজারু, ধনেশ, কচ্ছপ, পানকৌড়ি, বগ, কুমির, বন বিড়াল, বিশাল আকৃতির ভাল্লুক, বানর ও গাধা।
শিশু পার্ক রয়েছে বিশাল নাগরদোলা, ট্রেন, চরকি, ম্যাজিক নৌকা ও রেসিং বাইক । ৩০ বা ৪০ টাকা দিয়ে আলাদা আলাদা রাইড এর টিকিট কিনে আপনিও চড়তে পারবেন এসব রাইডে।
শিশু পার্ক থেকে একটু সামনে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা। গেট থেকে ২০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সংগ্রহশালা প্রবেশের সময় আপনার সাথে ব্যাগ থাকলে তা গেটে থাকা লকারে রেখে যেতে হবে। লকারের ভেজ নাম্বার নিয়ে যেতে হবে। গেট থেকে একটু সামনে গেলে দেখতে পাবেন জয়নুল আবেদীন ভাস্কর্য। সংগ্রহশালায় প্রবেশ করেই দেখতে পাবেন বেশ কিছু বই যা বিক্রয়ের জন্য রাখা রয়েছে। বইয়ের নাম ও মূল্য পাশের টেবিলে দেখতে পাবেন। দোতালা উঠেই দেখতে পাবেন জয়নুল আবেদীনের বিভিন্ন শিল্প কর্ম ও তার বিভিন্ন ছবি।
এই সংগ্রহশালায় প্রথমে ৭০ টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। তার বেশিরভাগই ছিল তৈলচিত্র। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণকালে শিল্প চার্জ অঙ্কিত ছবি। গুণ টানা নদী পারাপারের অপেক্ষায় দাওয়া পুত্র এবং দুর্ভিক্ষ এখানে ১৭ টি অতি আকর্ষণীয় ছবি ১৯৮২ সালে চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে ১০টি ছবি ১৯৯৪ সালে আবারো উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে এখানে মোট ৬৩ টি চিত্রকর্ম রয়েছে এ ছাড়া রয়েছে শিল্পচর্চার ব্যবহৃত জিনিস এবং তার স্থিরচিত্র চিত্রগুলো ভবনের বারান্দায় শোভা পায়। সংগ্রহ শালার ভিতরে ভিডিও করা অনুমতি নেই।
শিল্পচার্জ জয়নুল আবেদীন পার্ক যেতে হলে প্রথমে ময়মনসিংহ আসতে হবে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ বাস করে আসা যায়। ঢাকা থেকে কিছু বাস ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়। তা হল, শামীম এন্টারপ্রাইজ, এনা, আলম এশিয়া, সৌখিন কিংবা নিরাপদ পরিবহনে। বাসে করে ২৬০ টাকা ভাড়ায় ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে ময়মনসিংহ যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে অনেক ট্রেন ছেড়ে যায়। তা হল, ব্রক্ষপুত্র (সন্ধ্যা ৬ঃ১৫), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস
(দুপুর ১ঃ১৫), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকেল৪ঃ৪৫) এবং হাওর এক্সপ্রেস (রাত ১০ঃ১৫)। এই সব ট্রেনে যে কোনটাই আপনার সময়ও পছন্দমত ট্রেনে সরাসরি ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। শ্রেণীবিধে ভাড়া .১২০থেকে ২৭১ টাকা। ট্রেনে করে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘন্টা।
ময়মনসিংহে রেলস্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে রিস্কা করে সহজে শিল্প চার্জজয়নুল আবেদীন পার্ক যাওয়া যায়।
থাকার জন্য ময়মনসিংহ অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। যেমন হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল আল হেরা, হোটেল মুস্তাফিজ, সিলভার ক্যাসেল, রিভার প্যালেস। আর মাঝারি হোটেলের মধ্য রয়েছে হোটেল আশাদ, ইশা খা এবং নিরালাতে যাত্রী যখন করতে পারেন।
ময়মনসিংহ ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সারিন্দা, হোটেল খন্দকার, ধানসিঁড়ি, সেভেন ইলেভেন, হোটেল মিনার রুম 3 এবং ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব ক্যান্টিন। এছাড়াও সময় সুযোগ থাকলে ময়মনসিংহে ঐতিহ্যবাহী মালাইকারি, গুড়ের সন্দেশ এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাঁটি দই খেয়ে দেখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি
বোটানিক্যাল গার্ডেন সবুজের আচ্ছাদন আর নির্মল বাতাসের শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসেবে পরিচিত । ময়মনসিংহ জেলার…
মালনি ছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম চা বাগান।…
সাগর কন্যা দ্বীপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত এই জেলা নাম ছিল দক্ষিণ…
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি প্রত্নতবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। যেটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ত্ত্ব সংগ্রহে…
প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক সবাই একটু কম বেশি চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের পাট এর খোঁজ…
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে…