MYMENSINGH

মুক্তাগাছা  জমিদার বাড়ি (Muktagaha Jomidar Bari) – প্রাচীন স্থাপনা

 

 মুক্তাগাছা  জমিদার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার একটি  প্রাচীন স্থাপনা। প্রায় ২০ একর জায়গার উপর এই রাজবাড়ী কড়েছিলেন।  মুক্তাগাছা জমিদার জগত কিশোর আশ্চর্য চৌধুরী কালের করাল গ্রাসে রাজ বাড়ির বেশিরভাগ স্থাপনের অবস্থা হতশ্রী হলেও ব্রিটিশ জমানা থেকে টিকে আছে প্রথা ও সূর্যের  প্রতীক হয়ে।

ইতিহাস

 মুক্তাগাছার নাম আগে কিন্তু ছিল বিনোদ বাড়ি। জমিদারকে গাছরা নামে শোনার প্রদীপ উপহার দিয়েছিলেন মুক্তারাম  কর্মকার নামের এক ব্যক্তি খুশি হয় বিনোদ বাড়ির নাম পাল্টিয়ে রাখেন মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি

মুক্তাগাছা  জমিদার বাড়ির বর্ণনা

 দেখলেই বোঝা যায় এ বাড়ির নির্মাণ কৌশল আর  কারু কাজের  প্রাচ্য এবং পার্শ্বতত্ত্ব ঘরোনার চমৎকার  মিশেল । বয়সের ধারে এখন  জীর্ণ হলেও সেকালে বেশ আকর্ষণীয় ছিল এই বাড়ি ছিল শক্তপোক্ত। তাইতো ১৮৯৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের বহত বীরত্বের পরেও টিকে আছে এই বাড়িটি।  জমিদার জগত  কিশোর   আচার্য চৌধুরী  এই রাজবাড়ি সাজিয়েছিলেন বসতবাড়ি, মন্দির , মন্ডপ, সিন্দুক ঘর, রংমহল, আর নাট্যমঞ্চের মতো দারুন সব স্থাপনা।  রাজবাড়ী ব্যবহার করা লোহার পিলারগুলো শুধুর ইংল্যান্ড থেকে আনা। পিলারের সাথে সাথে  সেগুন কাঠ ও আনা হয়েছিল বার্মা থেকে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে পৃষ্ঠপোষকতায় জমিদার জগত কিশোর আচার্য চৌধুরী ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে। তার কারণেই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ হাফিজ আলি খা দবির খার মত প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের পা পড়েছে এই রাজবাড়ীতে। সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তি এই দুটোর প্রতিই টান ছিল জমিদারের।  এই রাজবাড়ী একাধিক ভবন ব্যবহৃত হয়েছে খাজনা আদায় সহ জমিদারের প্রশাসনিক কাজেও। ব্যাংকের বল্টে যেমন টাকা-পয়সা থাকে এই সিন্দুক ঘরেও সিন্দুকেও তেমনি টাকা পয়সা, সোনাদানা। রত্ন রাজি জমিদারের এর থাকা পরতো একটি বিশেষ ভবনে। এটি সেকালে এয়ার কন্ডিশনার যন্ত্র ছিল না কিন্তু গরম তো ছিল এখনকার মতই। করিতকর্মা জমিদার জাপানি নির্মাণ কৌশল কাজে লাগিয়ে শীতে তো নিয়ন্ত্রিত ভবন করেছিলেন। এখানে বায়ু চলাচলের কৌশলের ব্যবস্থা আর বিশেষ ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর বদৌলতে সারাখনই নাকি ঠান্ডা থাকত এই ভবন।  নিরানব্বই হাতির হাতিশাল থেকে শুরু করে আরো নানান স্থাপনা এক কালে প্রাণবন্ত ছিল এই রাজবাড়ীতে। অস্তন্ন অবহেলায় সৌন্দর্য হারালেও আকর্ষণীয়  এই  রাজবাড়ী মনের মুকুরে নিত্য জাগায় বাঙালি। জমিদারের ঘটনা পরম পাড়া জমিদারের পাট চুকে গিয়েছে কবে তবুও অমলিন সমূলে অতীতের দিক দিয়ে ।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহ

 ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহ আসা যায়। মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি যেতে হলে আগে ময়মনসিংহ আসতে হবে। ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা যেতে হলে ঢাকা থেকে বেশ কিছু পরিবহন ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তা হল শামীম এন্টারপ্রাইজ, এনা আলম, এশিয়া সৌখিন কিংবা নিরাপদ পরিবহন। নিরাপদ পরিবহনের ভাড়া হবে ২৬০ টাকা। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা ।

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে ময়মনসিংহ

 ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও ময়মনসিংহ আসা যায়। ঢাকা থেকে বেশ কিছু ট্রেন ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে  যায়। তা হল ব্রক্ষপুত্র সন্ধ্যা .৬ঃ১৫,তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল ৭:৩০, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দুপুর ১ঃ১৫, যমুনা এক্সপ্রেস বিকেল ৪ঃ৪৫ এবং হাওর এক্সপ্রেস রাত ১০ঃ১৫এই ট্রেনগুলো শ্রেণীবিধে ভাড়াহবে ১২০ থেকে ২৭১ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘন্টা।

ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি

 ময়মনসিংহ এসে টাঙ্গাইল গামী বাসে করে  মুক্তাগাছা যেতে পারেন। বাঁশের ভাড়া পড়বে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়াও সিএনজি রিজার্ভ বা লোকাল সিএনজিতে যাওয়া যায়। মুক্তাগাছা লোকাল সিএনজি ভাড়া হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং হিজাব সিএনজি ভাড়া হবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা যেতে সময় লাগবে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। ময়মনসিংহ থেকে  মুক্তাগাছার দূরত্ব হবে ১৭ কিলোমিটার। মুক্তাগাছা থেকে রিস্কা নিয়ে বাজারের ভেতর দিয়ে একটু সামনে গেলেই দেখা মিলবে  মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি।  মুক্তাগাছা থেকে পায়ে হেঁটেও মুক্তাগাছা জমিদের বাড়ি যাওয়া যায়। এছাড়াও ঢাকা থেকে সরাসরি ইসলাম পরিবহনের  বাস করে মুক্তাগাছা যাওয়া যায়  এবং আপনার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও  মুক্তাগাছা রাজবাড়িতে আসতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

 ময়মনসিংহ শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী হোটেলে থাকতে পারেন। এছাড়াও মুক্তাগাছা বেশকিছু হোটেল রয়েছে প্রয়োজনে সেগুলোতেও থাকতে পারেন।

কোথায় খাবেন

মুক্তাগাছা  জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপাল পালের মন্ডার দোকান।এই  মন্ডার  সুনাম সারাদেশের মানুষের কাছেই অতি পরিচিত। এক কেজি মন্ডার দাম ৪৪০ টাকা এবং প্রতি পিস মন্ডার দাম ২২টাকা। মুক্তাগাছার এই বিখ্যাত মন্ডাখেতে ভুলে গেলে আপনার এই আনন্দময় ভ্রমণ অপূর্ণই থেকে যাবে। এছাড়াও ভারি খাবার খেতে চাইলে   মুক্তাগাছা বাজারে মোটামুটি মানের হোটেল  রয়েছে। আপনি চাইলে এখানেও খেতে পারেন এবং আপনি চাইলে ময়মনসিংহে ও ফিরে আসতে পারেন। ময়মনসিংহে বেশ কিছু ভালো খাবার হোটেল রয়েছে।

ময়মনসিংহ শহরের কাছে দর্শনীয় স্থান

  • শিল্পচার্জ জয়নুল আবেদীন পার্ক
  • শিল্পচার্জ জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা
  • শশী লজ / ময়মনসিংহ রাজবাড়ী
  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বোটানিক্যাল গার্ডেন

আরো পড়ুনঃ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

Shahana

View Comments

Recent Posts

বোটানিক্যাল গার্ডেন( Botanical Garden) –  ময়মনসিংহ

বোটানিক্যাল গার্ডেন সবুজের আচ্ছাদন আর নির্মল বাতাসের শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসেবে পরিচিত । ময়মনসিংহ জেলার…

55 years ago

মালনি ছাড়া চা বাগান (Malnicherra Tea Garden) –  বাংলাদেশের প্রথম ও বৃহত্তম চা বাগান

মালনি ছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম চা বাগান।…

55 years ago

সাগর কন্যা দ্বীপ – জেলা ভোলা ভ্রমণ

সাগর কন্যা দ্বীপ  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ।  বরিশাল  বিভাগের অন্তর্গত এই জেলা নাম ছিল দক্ষিণ…

55 years ago

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (varendra Research Musem) – বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি প্রত্নতবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। যেটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ত্ত্ব সংগ্রহে…

55 years ago

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক (Proyash Sena Binodon Park) – রংপুরে বিনোদন পার্ক

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক সবাই একটু কম বেশি চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের পাট এর খোঁজ…

55 years ago

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকা মিরপুর(Bangladesh National Zoo) – ঢাকা মিরপুর

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত।  চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে…

55 years ago