বিছানাকান্দি সিলেট (Bisanakandi sylhet) জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর একটি গ্রাম। এই গ্রামটি স্থায়ীভাবে কুয়েরিং গাং নামে ব্যাপক পরিচিত। এটি মূলত জাফলং এবং ভোলাগঞ্জ এর মতোই একটি পাথর কোয়ারি যেখান থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়। জাফলং থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার।বিছানাকান্দির এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথর আর পাথর মনে হয় যেন, একটি পাথরের বিছানা। মনে হয় যেন, আকাশ আর মেঘের সাথে পাহাড়ের দলগুলো মিশে আছে। যতই কাছে যাই পাহাড় গুলো ততই আকাশ থেকে যেন দূরে যেতে থাকে। মনে হয় যেন, পাহাড়ের কাছেই আকাশ, মেঘের দলগুলো মনে হয় আঠার মত লেগে আছে পাহাড়ের গায়ে। মৌসুমে এখানে আসল সৌন্দর্য চোখে পড়ে না। এখানে বর্ষাকালে সৌন্দর্য চোখে পড়ে। কারণ বর্ষা মৌসুমে কালো মেঘে আচ্ছা দিতে থাকে। বর্ষাকালে পানির ঢল জায়গাটি কে মায়াময় বানিয়ে তোলে। স্বচ্ছ শীতল পানির তলদেশে পাথরের পাশাপাশি নিজের শরীরের লোম ও দেখা যায় স্পষ্ট। জল পাথরে বিছানায় শুয়ে বসে অনেকে ছবি তুলতে থাকে। আবার অনেকে গোসল করে থাকে। পাথর পানি আর মেঘ নিয়ে যেন বিছানাকান্দি। এইখানের সৌন্দর্যের কোন তুলনা হয়না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য হার মানতেই হয় নাগরিক সভ্যতাকে। এখানে যাওয়ার পর যে কথাটি প্রথমে মনে হবে তা হল প্রশান্ত। এই প্রশান্তি এবং সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে প্রতি বছর পর্যটক এসে ভিড় জমায়।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বিছানাকান্দি সারা বছরই ভ্রমণ করা যায়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। শীতকালে এখানে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এখান থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। সেই সাথে পাথর বহনকারী নৌপথ, ট্রাক্টরের চলাচল বেড়ে যায়। শীতকালে বা শুষ্ক মৌসুমে এখানকার পরিবেশ অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। বর্ষার সময় বিছানাকান্দি হয়ে ওঠে অনেক সুন্দর। সিলেট নগরীর সৌন্দর্যটা আসলে বর্ষাকালে বেশি উপভোগ করা যায়। আর তাছাড়া বর্ষার সময় বিছানাকান্দি পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়।
বিছানাকান্দি ইন্ডিয়ার বাজার(Bisanakandi indiar bazar)
বিছানাকান্দি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এখান থেকে আপনি সহজেই ইন্ডিয়ান ফলস দেখতে পাবেন। যেখান থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিছানাকান্দিতে। বিছানাকান্দিতে ভারত সীমান্তে একটি বাজার রয়েছে। সেখানে শুক্রবার এবং সোমবার বাজার বসে। আপনি যদি ভিসা এবং পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে যেতে চান তাহলে অবশ্যই বাজারের দিনগুলোতে ভ্রমণ করতে যাবেন। এই দিনগুলোতে ভিসা এবং পাসপোর্ট ছাড়া ভারত থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। এই বাজার থেকে ভারতের বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করা যায়।
ভোলাগঞ্জ থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব
ভোলাগঞ্জ থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। ভোলাগঞ্জ রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। এখানে রয়েছে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন।এ স্ট্রেশন দিয়ে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চলে।এ স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রধানত চুনাপাথর আমদানি করে থাকেন। চুনাপাথর আমদানির দৃশ্য অবলোকনের বিষয়টি ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। ভোলাগঞ্জ ও বিছানাকান্দির মত পাথরকোয়ারি। তাই প্রতিবছর পর্যটকরা ভোলাগঞ্জ ভ্রমণ করতে আসে।
পাথর আহরণের দৃশ্য
ভোলাগঞ্জ কোয়ারীতে শুষ্ক মৌসুমে প্রধানত গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। প্রথমে শ্রমিকরা কোয়ারী উপরে বালি অপসারণ করে। তারপর ৭ থেকে ৮ ফুট নিচু গর্ত খোলার পর দেখা যায় যে নিচে পানি উঠতেছে। পানি উঠে গেলে , শ্যালো মেশিন দিয়ে কুয়ারির পানি অপসারণ করা হয়। তারপর পাথর উত্তোলন করে। আরো অনেকভাবে পাথর উত্তোলন করা যায়। কেউ কেউ শিবের নৌকা পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করে। বিভিন্ন ধরনের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য ও খুব উপভোগ্য।
কিভাবে যাবেন(How to go bisnakandi)
ঢাকা থেকে বাসে ট্রেনে এবং আকাশ পথে ও সিলেট যাওয়া যায়
ঢাকা থেকে সিলেট
ঢাকা থেকে সিলেট বাসে করে গেলে সময় লাগে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা। ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির বাস রয়েছে। নন এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। কিছু বাসের নাম উল্লেখ করা হলো:
গ্রীনলাইন পরিবহন
- রাজার বাগ কাউন্টার ঢাকা – ০২৯৩৪২৫৮০
- আরামবাগ কাউন্টার ঢাকা – ০১৩০০৬০০০০৯
- সিলেট সুবহানি গেট কাউন্টার – ০১৭৩০৬০০৩৬
সেন্ট মার্টিন পরিবহন
- কল্যাণপুর কাউন্টার ঢাকা – ০১৭৬২৬৯১৩৫৩
- আরামবাগ কাউন্টার ঢাকা – ০১৭৬২৬৯১৩৪১
- পান্থপথ কাউন্টার ঢাকা – ০১৭৬২৬৯১৩৬৪
এনা পরিবহন
- সিলেট বাস টার্মিনাল কাউন্টার সিলেট – ০১৭৬০৭৯৯৮৬
- মহাখালী বাস টার্মিনাল কাউন্টার ঢাকা – ০১৭৬০৭৩৭৬৫০
- টঙ্গী স্টেশন কাউন্টার ঢাকা – ০১৭৬০৭৩৭৬৫৩
লন্ডন এক্সপ্রেস
- কলাবাগান কাউন্টার ঢাকা – ০১৭০১২২০০৩৩
- আরামবাগ কাউন্টার ঢাকা – ০১৭০১২২০০১১
শ্যামলী পরিবহন
- কলাবাগান কাউন্টার ঢাকা – ০২৯১৪১০৪৭
- কল্যাণপুর কাউন্টার ঢাকা – ০২৮০৯১১৬১
- হুমায়ুন রশিদ চত্বর সিলেট – ০৪৪৭৮৮৮০৯০৭
হানিফ এন্টারপ্রাইজ
- গাবতলী কাউন্টার ঢাকা – ০২৯০১২৯০২
- কল্যাণপুর কাউন্টার ঢাকা – ০১৭১৩০৪৯৫৪০
- হুমায়ুন রশিদ চত্বর কাউন্টার সিলেট – ০১৭১১২৪৪২০
ট্রেনে করে
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে হবে। বর্তমানে জয়ন্তীকা পাড়াবাত এবং উপবন এক্সপ্রেস চলাচল করে। এর ভাড়া নন এসি ৩২০টাকা এবং এসি ৬৪০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেট যেতে সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা।
আকাশ পথে
ঢাকা থেকে আকাশ পথে সিলেট যাওয়া যায়। বর্তমানে ইউএস বাংলা, নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ সিলেট চলাচল করে। এর ভাড়া হবে ৩২০০ থেকে ৬২০০ টাকা পর্যন্ত।
সিলেট থেকে বিছানাকান্দি
সিলেট থেকে বিছানাকান্দি যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে আমবারখানা পয়েন্ট। এখান থেকে মাইক্রো বা সিএনজি ভাড়া করে যেতে হবে। মাইক্রো ভাড়া হবে ৪০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা এবং সিএনজি ভাড়া হবে ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। আমবারখানা থেকে নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত মটর বোর্ড করে বিছানাকান্দি যাওয়া যায়। ইঞ্জিন চালিত মোটর বোর্ড ভাড়া পড়বে ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০টাকা। একটি ভোটে ১২ থেকে ১৫ জন বসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
বিছানাকান্দি থাকার জন্য তেমন ভালো কোন হোটেল নেই। তাই বিছানাকান্দি ভ্রমনে গিয়ে অধিকাংশ পর্যটক বিছানাকান্দি না থেকে সিলেটে থাকেন। কারণ সিলেটে অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে কিছু হোটেলের নাম উল্লেখ করা হলো:
- গ্রান্ড প্যালেস, জেলার পার, সিলেট – ০১৭১৩৫৫৮৮৭
- হোটেল নুরজাহান গ্রান্ড, দরগা গেট, সিলেট – ০১৯৩০১১১৬৬৬
- রিসমন্ড হোটেল, আল হামরা শপিং সিটি, হযরত শাহজালাল রোড, সিলেট – ০১৭২১৫০৯৫৯৮
- হোটেল গার্ডেন ইন, শাহজালাল ব্রিজ লিংক রোড, সিলেট – ০১৭১১২৭১১৮৫
- ডব্লিউ হোটেল, দরগা গেট, হযরত শাহজালাল রোড, সিলেট – ০১৭২৭৭৬৭৭৪৬
- হোটেল রিলাক্স ইন, জেল রোড, সিলেট – ০১৭১৯৯১৯০৪০৮
- বটম হিল প্যালেস হোটেল, দরগা গেট, হযরত শাহজালাল রোড, সিলেট – ০১৭০০৭৬৩৫১২
- দা গ্রান্ড হোটেল, দরগা গেট, সিলেট – ০১৯৭০৭৯৩৩৬৬
- হোলি ইন, দরগা গেট, হযরত শাহজালাল রোড, সিলেট – ০১৯৩৫৬৬৬৯৯
বিছানাকান্দির রিসোর্ট (Bisanakandi resort)
বিছানাকান্দিতে থাকার মত ভালো কোন রিসোর্ট নেই। তবে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্য বিছানাকান্দি সংলগ্ন কিছু রিসোর্ট রয়েছে। এই রিসোর্ট এ থাকতে পারেন। এ রিসোর্ট গুলোর কিছু নাম ও বিছানাকান্দি থেকে এর দূরত্ব দেওয়া হল:
- জলপরী আবাসিক পর্যটন হোটেল, সিলেট বাংলাদেশ – ০১৭৮৯১৪৯৪১৪
- সাদা পাথর হোটেল এন্ড রিসোর্ট, ভোলাগঞ্জ রোড,ভোলাগঞ্জ বাংলাদেশ – ০১৩১৭৩৫৫৭৮৮
- দূরত্ব ৯.৩ মাইল
- চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্ট, ভিলেজ লেটকাইচু পয়েন্ট, চেরাপুঞ্জি ইন্ডিয়া – ৮৭৯৪৮০৩৮৩৩
- দূরত্ব ১৪.২ মাইল
- গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল এন্ড রিসোর্ট, এয়ারপোর্ট রোড, সিলেট বাংলাদেশ – ০১৩২১২০১৫৯৩
- দূরত্ব ১৫.৫ মাইল
- বিটেল নাট রিসোর্ট, ঢাউকি, মেঘালয়, ইন্ডিয়া – ৯১১২২০১১৯
- দূরত্ব ৮.১ মাইল
- পোলো ওয়ারশিড রিসোর্ট, চেরাপুঞ্জি মেঘালয়, ইন্ডিয়া – ৮৭৯৪৭০১৬৩৭
- দূরত্ব ১০.২ মাইল
- সুলাওয়াডু রিসোর্ট, চেরাপুঞ্জি, ইন্ডিয়া – ৭৬২৯৮৪৫৪২৩
- দূরত্ব ১২.৪ মাইল
- স্মোকি ফলস মেক এফ আই রিসোর্ট মাও খান ইন্ডিয়া – ৬০০৯৩৮১৮১০
কোথায় খাবেন
বিছানা কান্দিতে তেমন ভালো কোন খাবার হোটেল নেই। স্থায়ীভাবে হোটেল পাওয়া যায় না। এখানে কিছু অস্থায়ী খাবার হোটেল পাবেন। এই হোটেলে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ডাল, ভাত, সবজি খেতে পারেন। কিছু শুকনো খাবার নিতে পারেন। হাঁদার পার একটি হোটেল রয়েছে গনিমিয়ার সেই হোটেলে বুনা খিচুড়ি পাওয়া যায়। সেখানে ভুনাখিচুড়ি খেলতে পারেন।
সিলেট জেলার আকর্ষণীয় জায়গা গুলো হল
- জাকারিয়া সিটি
- জাফলং
- অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড
- পান্থুমাই
- ভোলাগঞ্জ
- রাতারগুল
- লালা খাল
- হাকালুকি হাওর
- লাক্কাতুরা চা বাগান
- মালনি ছড়া চা বাগান
- হযরত শাহজালাল মাজার
- হযরত শাহপরান মাজার
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ভ্রমণ করুন।
- ছোট নৌকায় ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
- নৌকায় এবং সিএনজি ভাড়া নেওয়ার আগে ভালোভাবে দরদাম করুন।
- জলে ঝাঁপ দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারণ চারদিকে শুধু পাথর আর পাথর।
- লাইক জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
- যারা সাঁতার জানেন বা না জানেন উভয়ই লাইক জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
- মাঝে মাঝে পাথর খুব পিচ্ছিল হয় তাই সাবধানে চলাচল করুন।
- পাথর উত্তোলন করার ফলে এখানে কয়েকটি গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে তাই কোথাও যাওয়ার আগে গাইডের সাহায্য নিন।
- পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।
- স্থায়ীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন ।
আরো পড়ুন:জাফলং
Leave a Reply