Dhaka

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকা মিরপুর(Bangladesh National Zoo) – ঢাকা মিরপুর

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত।  চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান।  ঢাকার হাইকোর্ট চত্বরে ১৯৫০ সালে জীবজন্তুর প্রদর্শন শালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  এই চিড়িয়াখানাটি পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে এটি স্থানান্তর করা হয়।  বর্তমান অবস্থানে চিড়িয়াখানাটি উদ্বোধন করা হয় ১৯৭৪ সালে 23 শে জুন এবং একই দিনে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।  ১৯০৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা চিড়িয়াখানা নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়।  এই চিড়িয়াখানার বার্ষিক বাজেট ৩৭.৫ মিলিয়ন।  ঢাকা যার মধ্য  পশুদের খাবারের জন্য খরচ করা হয় ২৫ মিলিয়ন টাকা।  বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ দর্শনার্থী বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে থাকেন।

চিড়িয়াখানার ইতিহাস

 উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তৎকালীন নবাবরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে টাকার শাহবাগে একটি চিড়িয়াখানার   ঘোড়াপত্তন করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের একটি চিড়িয়াখানার অভাব অনুভূত হয় এর প্রেক্ষিতে ৫০ দশকের শেষ ভাগে চার থেকে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের সামনে বর্তমান ঈদগা এলাকায় ছোট আকারে একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। চিড়িয়াখানাতে ছিল একটি বড় পুকুর, পুকুরের পাড়ে ছিল একটি বলাকা প্রদর্শনী, সেখানে ছিল, পাতিহাঁস, রাজাহাস, শীতের পরিযেই হাঁস আরো ছিল অন্যান্য পাখপাখালি, হারগিলা, সারস, ময়ূর ও প্রদর্শিত আরো ছিল বানর, হনুমান, হরিণ, সরীসৃপ এর মধ্যে ছিল অজগর কুমির। 

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঢাকায় একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা স্থাপনে ওই বছরের ২৬ শে ডিসেম্বর চূড়ান্তভাবে প্রস্তাবটি ঘোষিত হয়। এই ঘোষণা প্রেক্ষিতেই বর্তমান আধুনিক চিড়িয়াখানাটি প্রদর্শিত ।

ঢাকার চিড়িয়াখানার আয়তন

 বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টরের মধ্য ১৩ হেক্টরের দুটি লেক রয়েছে এই চিড়িয়াখানার চত্বরের।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণী বৈচিত্র ও বর্ণনা

 বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় .১৯১ প্রজাতির ৪৯৭২ টি প্রাণী রয়েছে।  ২০২২ সালের হিসেব নেতাদের এই প্রাণীদের মধ্যে প্রধান আকর্ষণ হল পৃথিবীর বিখ্যাত বাংলা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রহীন, বানর, সিংহ, জলহস্তী, নীলগই, গন্ডার, ভাল্লুক, কুমির, জেব্রা,  ফ্লেমিঙ্গো, পানকৌড়ি  ও মাছরাঙ্গা অন্যতম।

 চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করে সোজা গিয়ে বাম দিকের পশুপাখি দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে উত্তর দিকে অর্থাৎ ডান দিকে যাবেন বাঘ এবং হরিণের খাঁচা রয়েছে। উত্তর দিকে বা ডানদিকের একেবারে শেষের দিকে বাঘের  খাঁচার  পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বিশাল একটি লেক যার নাম উত্তর  লেক। বাঘ এবং হরিণ দেখা শেষ করে আপনি চলে আসবেন চিড়িয়াখানার মধ্য অঞ্চলে। এখানে আছে বিভিন্ন রকমের পাখি, বাঘ, সিংহ, সহ বিভিন্ন প্রাণী বা দিক দিয়ে একটু সামনে গেলে দেখতে পারবেন কচ্ছপের খাঁচা। এখান থেকে অল্প একটু সামনে হেঁটে গেলে দেখতে পাবেন কুমির, গন্ডার এবং শকুনের খাঁচা ।

 গন্ডার একপ্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণী গন্ডারের  ৫ প্রজাতির মধ্য চারটি ইতিমধ্য বিরক্ত কর সম্মুখীন একটি গন্ডার ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

 গত তিন দশকে উপমহাদেশে ৭৫ শতাংশ শকুন মারা গিয়েছে।  ১৯৮০ দশকে সার্কভুক্তদের প্রায় চার লক্ষ শকুনের অস্তিত্ব ছিল। অথচ এখন এর সংখ্যা কমে ৪০ হাজারে দাঁড়িয়েছে । এখান থেকে আর একটু সামনে গেলে দেখতে পাবেন উট ,শিয়াল এবং হায়নার খাচা।

 চিড়িয়াখানা কিন্তু আয়তনে অনেক বড়। প্রায়  ১৮৬ একর তাই সম্পূর্ণ চিড়িয়াখানা দেখতে  হলে আপনাকে অনেক  হাঁটতে হবে এবং বেশ সময় লাগবে তাই চেষ্টা করবেন চিড়িয়াখানায় সকালের দিকে আসতে। যাতে বিশ্রাম নিয়ে ধীরে   ধীরে সবকিছু ঘুরে দেখতে পারেন অসংখ্য গাছপালায় আচ্ছাদিত। এই চিড়িয়াখানার প্রবেশ করলে আপনার মনেই হবে না আপনি ঢাকা সিটির ভিতরে আছেন।  চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের জন্য অনেক  বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আপনি চাইলে সেখানে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। এছাড়াও জায়গায় জায়গায় ওয়াশরুম এবং পানি খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রাস্তার অপর পাশে তাকালে হাতি দেখতে পাবেন। এখান থেকে অল্প একটু উত্তর দিকে গেলে দেখতে পাবেন কমন, ইলিয়েন, গাধা, ঘোড়া এবং জেব্রার খাঁচা ।

 কমন  এলিয়েন এন্টি লুক প্রকৃতির আফ্রিকান প্রাণী। আফ্রিকা মহাদেশের অনেক স্থানে এদের দেখতে পাওয়া যায়। একটি মেয়েকে কমন এলিয়েন এর ওজন ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে আর পুরুষ এলিয়েন এর ওজন হয় ৪০০ থেকে ৯০০ কেজি পর্যন্ত।

 সামনে আছে  জেব্রার খাঁচা  জেব্রা হলো আফ্রিকান স্থানীয়পাই প্রাণী।  এরা সাদা কালো ডোরার জন্য পরিচিত।  জেব্রার এই ডোরার নকশা  প্রত্যেকের জন্য আলাদা হয়।  জেব্রা সাধারণত দুই থেকে তিন  মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।  আর এদের উচ্চতা হয় ১.২৫ থেকে ১.৫০ মিটার। এদের ওজন ৩০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।  জেব্রাকে ঘোড়ার মত পোষ মানানো যায় না।

 এরপর একটু উত্তর দিকে হেঁটে গেলে সামনে পাবেন মায়া হরিণের খাচায।  এরপর সামনেই আছে জলহস্তির খাঁচা।  জলহস্তির খাচাটি অনেক বড়।  জলহস্তী থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলচর প্রাণী হিসেবে ধরা হয় প্রথম অবস্থান হাতির দখলে।  পুরুষ প্রজাতির দৈর্ঘ্য 3.5 মিটার এবং উচ্চতা ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।  এদের ওজন ৩২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।  বাসস্থান হিসেবে বিবেচনা করলে  জলহস্তীর দুটি প্রজাতি আফ্রিকা মহাদেশে।  এরা চল্লিশ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।  তবে কোন কোন ক্ষেত্রে বন্ধি অবস্থায় ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

একটু পরেই আপনি অজগর সাপের খাঁচা।  সাপগুলো দেখতে  বিশাল এখানে অজগর ছাড়াও কয়েক প্রকার  বিষধর সাপ রয়েছে।   সামনে রয়েছে বানরের  খাঁচা।

 উত্তর দিকে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার।  রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের ভারতের জাতীয় পশু। সাধারণ বাংলাদেশ ও ভারতে দেখতে পাওয়া যায় এছাড়াও নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও তিব্বতের কোন কোন অঞ্চলে এই প্রজাতির  বাঘ দেখতে পাওয়া যায়।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পাশেই রয়েছে চিত্রা হরিণ।  এই চিত্রা হরিণের খাঁচার ভিতর অনেকগুলো চিত্রা হরিন  রয়েছেন।  চিত্রা হরিণগুলো মানুষকে ভয় পায় না।  চিত্রা হরিণ উপমহাদেশে হরিণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন।  চিত্রা  হরিন নামটি এসেছে বাংলা চিত্রা বা চিত্রল থেকে যার অর্থ  ফুটা বা ছোবযুক্ত। 

কিভাবে যাবেন

 চিড়িয়াখানা যেতে হলে  আগে ঢাকায় যেতে হবে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা  গামী বাস চলাচল করে এছাড়া সিএনজি, প্রাইভেটকার, টেক্সি এবং নিজস্ব পরিবহন করেন চিড়িয়াখানায় যেতে পারেন। 

কোথায় খাবেন

 চিড়িয়াখানার সামনে বেশ কিছু খাবারের দোকান রয়েছে আপনি চাইলে সেগুলোতে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই খাওয়ার পূর্বে খাবারের মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয় নিন ।

খোলাও বন্ধের সময়সূচী

গ্রীষ্মকাল

 এপ্রিল থেকে অক্টোবর

 সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

শীতকাল

 নভেম্বর থেকে মার্চ

 সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

 চিড়িয়াখানা প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে।  তবে রবিবার সরকারি ছুটির দিন  হলে সেই রবিবার চিড়িয়াখানা খোলা থাকে।

প্রবেশ টিকিট মূল্য

দুই বছরের কম বাচ্চার জন্য কোন টিকিট লাগবে না।  তবে দুই বছরের বেশি যে কারো জন্য মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং মিউজিয়াম প্রবেশ  করলেটিকিট মূল্য ১০ টাকা। এছাড়াও স্কুল কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট এর ক্ষেত্রে প্রবেশ টিকিটের মূল্য অর্ধেক সেই ক্ষেত্রেনিজ  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখাতে হবে।

পিকনিক স্পট ভাড়া

 উৎসব এবং নিঝুম নামের পিকনিক স্পট সারা দিনের জন্য ভাড়া করতে লাগবে যথাক্রমে ৬ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা।

কার  পার্কিং  ফি

মাইক্রোবাস ,ট্যাক্সি, জিপ, প্রাইভেট কার, পিক আপ, এই ধরনের গাড়ির জন্য পার্কিং ফি ২০ টাকা। বাস, ট্রাক, মিনিবাস,এই ধরনের যানবাহনের জন্য ৪০ টাকা এবং সিএনজি ,টেম্পু, মোটরসাইকেল ইত্যাদির জন্য ১০ টাকা এবং রিস্কা, বাইসাইকেল ইত্যাদি দুই টাকা পার্কিং ফি।

আরো পড়ুনঃশিল্পচার্জ জয়নুল আবেদীন পার্ক

Shahana

Recent Posts

বোটানিক্যাল গার্ডেন( Botanical Garden) –  ময়মনসিংহ

বোটানিক্যাল গার্ডেন সবুজের আচ্ছাদন আর নির্মল বাতাসের শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসেবে পরিচিত । ময়মনসিংহ জেলার…

55 years ago

মালনি ছাড়া চা বাগান (Malnicherra Tea Garden) –  বাংলাদেশের প্রথম ও বৃহত্তম চা বাগান

মালনি ছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম চা বাগান।…

55 years ago

সাগর কন্যা দ্বীপ – জেলা ভোলা ভ্রমণ

সাগর কন্যা দ্বীপ  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ।  বরিশাল  বিভাগের অন্তর্গত এই জেলা নাম ছিল দক্ষিণ…

55 years ago

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (varendra Research Musem) – বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি প্রত্নতবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। যেটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ত্ত্ব সংগ্রহে…

55 years ago

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক (Proyash Sena Binodon Park) – রংপুরে বিনোদন পার্ক

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক সবাই একটু কম বেশি চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের পাট এর খোঁজ…

55 years ago

শিল্পচার্জ জয়নুল আবেদীন পার্ক (Zainal Abedin Park) – ময়মনসিংহ

   শিল্পচার্জ জয়নুল আবেদীন পার্ক ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা পুরাতন ব্রক্ষপুত্র।…

55 years ago