RAJSHAHI

পুঠিয়া রাজবাড়ী(Puthia Rajbari) – বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য

পুঠিয়া রাজবাড়ী বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্য রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী  ইন্দো – ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে আয়তকার দ্বিতলরাজবাড়ীটি নির্মাণ করে। যেখানে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন ইতিহাসের ছোঁয়া।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর অবস্থান

 রাজশাহী জেলা শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব নাটোর মহাসড়ক  অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর ইতিহাস

 সপ্তদশ শতকে মুঘল আমলে নীলাম্বর সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করার পর   পুঠিয়া রাজবাড়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি ভাগ হয় সেই ভাগাভাগিতে জমিদারের বড় ছেলে পান সম্পত্তির সাড়ে পাঁচ আনা এবং অন্য তিন ছেলে পান সাড়ে তিন আনা।১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা চালু ছিল। প্রথা বিলুপ্ত হলে  পুঠিয়া রাজবাড়ীর জমিদারী ও বিলুপ্ত হয়। তবে প্রসাদ টি ১৮৯৫ সালে হেমন্ত কুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানের নির্মাণ করেন। পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশেপাশে রয়েছে আরও ১৭ টি নিদর্শন। 

পুঠিয়ারাজবাড়ীর কিছু দর্শনীয় স্থান

দোলমঞ্চ

পুঠিয়া রাজবাড়ীর মুখোমুখি  মাঠ পেরিয়ে চারতলা বিশিষ্ট দোল মন্দিরটি অবস্থিত।  দোল মঞ্চের আকারে মন্দিরটি ধাপে ধাপে উপরে উঠে গেছে। একদম উপরে আছে গম্বুজ আকৃতির চুরা। ধারণা করা হয়, আনুমানিক নির্মাণ কাল উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে এই  দোলমঞ্চ নির্মাণ করেছিলেনপুঠিয়া রানী হেমন্ত কুমারী দেবী।

গোবিন্দ মন্দির

পুঠিয়ারাজবাড়ীর প্রাচীরের ভিতরে পোড়ামাটির অলংকরণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির বর্গাকারের নির্মিত এই মন্দিরে প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য ১৪.৬ মিটার। কেন্দ্রীয় কক্ষ ছাড়াও মন্দিরের চারপাশে বর্গাকার চারটি  কক্ষ আছে। ২৫০ বছর পুরনো বলে প্রচলিত থাকলে ও এরগায়ের  চিত্র ফলক দেখে ধারনা করা হয় স্থাপনাটি  উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত। 

রানিপুকুর

পুঠিয়ারাজবাড়ির পূর্ব পাশে এক একরের বিশাল পুকুরটির নাম রানী পুকুর। রাজবাড়ির সম্ভ্রান্ত মহিলাদের গোসলের জন্য রানী পুকুরের দেয়াল ঘেরা সান বাঁধানো ঘাট ভগ্নাঅবস্থায় এখনো টিকে আছে। পুঠিয়ারাজবাড়ীর আশেপাশে এরকম আরো ছয়টি রাজ দীঘি আছে।

বড় আনহিক মন্দির

পুঠিয়ারাজবাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘী এর পশ্চিম তীরে রয়েছে পূর্ব মুখি বড় আনহিক মন্দির। কারুকার্য করা মন্দিরের নিমানশৈলী বেশ আকর্ষণীয়। এই মন্দির দেখতে প্রতিদিন হাজারো  দর্শনার্থী ভিড় জমায়।

হাওয়াখানা

পুঠিয়া বিখ্যাত চারানি রাজা হাওয়াখানাটি ঐতিহাসিক পুঠিয়া ১৭ টি।  পুরো কৃতির একটি পুঠিয়া উপজেলা সদরের রাজপ্রাসাদ থেকে তিন কিলোমিটার এবং পুঠিয়াবাজার থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে তারাপুর গ্রামে হাওয়াখানা টি অবস্থিত।  ১০ একর আয়তন এর দিঘির মাঝখানে অবসর বিনোদনের জন্য নির্মিত হয়েছিল চুনসুরকি আর পাতলা ইটের গাঁথুনি দিয়ে। ভবনটির দৈর্ঘ্য ৪৫ফুট,প্রস্থ ৪২ ফুট, আর উচ্চতা ৩৪ফুট।  দরজা জানালা বিহীন ভবনটির প্রথম তলা পানির নিচে। পুঠিয়া রাজবাড়ী সদস্যরা রাজবাড়ী থেকে রথ বা হাতে যোগে পুকুরের নৌকায় চড়ে এসে অবকাশ যাপন এবং পুকুরের খোলা হাওয়া উপভোগ করতেন। 

পুঠিয়া রাজবাড়ী কিভাবে যাবেন

 রাজধানী ঢাকা শহর থেকে সড়করেল এবং আকাশ উভয় পথে রাজশাহী যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

ঢাকা থেকে রাজশাহী

 ঢাকা মহাখালী গাবতলী আব্দুল্লাহপুর ও কল্যাণপুর থেকে গ্রীন লাইন একতা এবং দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। ভাড়ায় রাজশাহীর যাতায়াত করে আর ন্যাশনাল ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভুতি বাস ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা ভাড়ায় চলাচল করা যায়।

ট্রেনে করে রাজশাহী

 ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রবিবার ব্যতীত সপ্তাহের ছয় দিন দুপুর ২ঃ৪৫ মিনিটে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশ্যে চলে যায়। এছাড়াও বনলতা এক্সপ্রেস শুক্রবার  ব্যতীত দুপুর একটা ৩০ মিনিট এর রাজশাহীর জন্য ছেড়ে যায়। ধুমকেতু এক্সপ্রেস বৃহস্পতিবার ব্যতীত সকাল ছয়টায় ও পদ্ম এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার  ছাড়া প্রতিদিন রাত  এগারোটায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

আকাশ পথে রাজশাহী

 আকাশ পথের রাজশাহীতে যেতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ। নভোএয়ার, ইউ এস বাংলা, এয়ারলাইন্স এর বিমানে ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার ৯৯ টাকায় ভ্রমন করতে পারেন।

রাজশাহী থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ি

রাজশাহী  গামী যেকোনো বাসে চরে রাজশাহী নাটোর মহাসড়কে পুঠিয়া বাস স্ট্যান্ড নেমে ৫ থেকে ১০ মিনিট পায়ে হেঁটে রাজবাড়ি যাওয়া যায়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নাটোরগামী বাসে করে এবং সরাসরি পুঠিয়া যাবার লোকাল বাসেকরে ও পুঠিয়াউঠিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাজশাহী এবং নাটোর থেকে সড়ক পথে পুঠিয়া রাজবাড়ীর দূরত্ব যথাক্রমে ৩৪ ও ১৮ কিলোমিটার।

কোথায় থাকবেন

পুঠিয়া বাস স্ট্যান্ড এর কাছে আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনি চাইলে এই হোটেলে রাত্রি জাপন করতে পারেন। এছাড়াও পুঠিয়াতে রাত্রিযাপনের জন্য জেলা পরিষদে দুটি ডাক বাংলো রয়েছে। জেলা পরিষদের অনুমতি এবং নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে বাংলোগুলোতে রাতে থাকা যায়। আপনি চাইলে এখানেও থাকতে পারেন। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নাম্বারঃ০৭২১৭৭৬৩৪৮

কিংবা রাজশাহীতে ফিরে এসে রাজশাহীর বিভিন্ন মানের হোটেল থেকে আপনার জন্য উপযোগী হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারেন। এখানে বিভিন্ন মানে হোটেল রয়েছে, আপনার বাজেট অনুযায়ী হোটেলে থাকতে পারেন। রাজশাহীর শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মডেল ১৯০০ থেকে ৪৬০০ টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাবেন। ফোন নাম্বারঃ ০৭২১৭৭৫২৩৭

কিছু হোটেলের নাম দেওয়া হলোঃ

  • অনন্যা আবাসিক হোটেলের মধ্য হোটেল হক্স ইন –  ০৭২১৮১০৪২০
  • নাইস ইন্টারন্যাশনাল – ০১৭২১৭৭৬১৮৮
  • মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল – ০৭২১৭৭১১০০
  • ডালাস ইন্টারন্যাশনাল – ০৭২১৮১১৪৭০
  • সুকরনা – ০৭২১৭৭১৮১

 

আরো পড়ুনঃ আলুটিলা গুহা

Shahana

Recent Posts

বোটানিক্যাল গার্ডেন( Botanical Garden) –  ময়মনসিংহ

বোটানিক্যাল গার্ডেন সবুজের আচ্ছাদন আর নির্মল বাতাসের শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসেবে পরিচিত । ময়মনসিংহ জেলার…

55 years ago

মালনি ছাড়া চা বাগান (Malnicherra Tea Garden) –  বাংলাদেশের প্রথম ও বৃহত্তম চা বাগান

মালনি ছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম চা বাগান।…

55 years ago

সাগর কন্যা দ্বীপ – জেলা ভোলা ভ্রমণ

সাগর কন্যা দ্বীপ  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ।  বরিশাল  বিভাগের অন্তর্গত এই জেলা নাম ছিল দক্ষিণ…

55 years ago

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (varendra Research Musem) – বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি প্রত্নতবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। যেটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ত্ত্ব সংগ্রহে…

55 years ago

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক (Proyash Sena Binodon Park) – রংপুরে বিনোদন পার্ক

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক সবাই একটু কম বেশি চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের পাট এর খোঁজ…

55 years ago

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকা মিরপুর(Bangladesh National Zoo) – ঢাকা মিরপুর

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত।  চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে…

55 years ago