তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুর শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে দারুন সুন্দর এই জমিদার বাড়ি। মাহিগঞ্জের তাজহাটে পড়েছে বলে জমিদার বাড়িতে পরিচিতি পেয়েছে এলাকার নামে। বাড়ির সামনের দিকটায় নজর কাড়ে চমৎকার বাগান। দেখে মনে হচ্ছে ঢাকার আহসান মঞ্জিল টা যেন তুলে এনে বসানো হয়েছে। রংপুরে বাড়ির এই সামনের অংশটা হুবহু আহসান মঞ্জিলের মতোই, তফাৎ শুধু এক জায়গায় এখানকার সিঁড়ি পুরোপুরি মার্বেল পাথরের তৈরি। মুঘল সম্রাট বাহাদুর সাহ সময় সুদূর পাঞ্জাব থেকে শেখ বংশীয় মান্না লাল রায়ের রংপুরের মাহিগঞ্জে এসেছিলেন রত্ন খচিত টুপি অর্থাৎ তাজ বিক্রি করতে। বৃত্তের জোরে এক সময় তিনি তাজহাটে প্রতিষ্ঠা পান। জমিদার হিসেবে তারই উত্তর পুরুষ নিঃসন্তান নির্ধারী লাল দত্তক নিয়েছিলেন বাঙালি ছেলে গোবিন্দ লাল কে, গোবিন্দ লাল ও তার ছেলে গোপাল লালের সময় সমৃদ্ধি শিখরে ওঠে তার হাতের জমিদারি।
ইতিহাস
তাজহাট জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন তাজহাটের জমিদার গোপাল লাল রায় বাহাদুর। এই বাড়িটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ১০ বছর। রুচিবান এবং অতিথি পরায়ণ জমিদার হিসেবে বেশ খ্যাতি ছিল। তার .১৯১৭সালে শুধুই বাড়ি নির্মাণ নয় উচ্চ শিক্ষিত আধুনিক মনের জমিদার গোপাল লাল রায় রংপুরের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশ রেখেছেন দারুন অবদান। অনেকে বলেন জমিদার গোপাল লাল রায় গম্বুজ আকৃতির আকর্ষণীয় এই হাওয়াখানায় উঠে নাকি গরমের সময় হাওয়া খেতেন। গোপাল লাল রায় ছিলেন হিন্দু এবং পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার তার মনোমুগ্ধকর তাজ বা মুকুটের কারণে এ এলাকা তাজহাট নামে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত প্রসাদটি ব্যবহৃত হয় রংপুর হাইকোর্টে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি শাখা বা বেঞ্চ হিসেবে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ বিচার বিভাগ কেন্দ্রীয় করনের লক্ষ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা সদরে বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগে আঞ্চলিক বেঞ্চ স্থাপন করে যার একটি রংপুরে স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রসাদ টিকে একটি সংরক্ষিত স্থাপনা তথা স্থাপত্য হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। এ স্থাপত্যর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করতোঃ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে। রংপুর জাদুঘর কে স্থানান্তর করে এ প্রসাদে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসেন। সিঁড়ি দিয়ে বাড়িটির ভেতরে উঠলেই রাইস বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী কক্ষ যাতে রয়েছে দশম ও একাদশ শতাব্দীর ট্রাকোটা শিল্পকর্ম। এখানে রয়েছে সংস্কৃত এবং আরবি ভাষায় লেখা বেশ কিছু প্রাচীন পান্ডুলিপি। এর মধ্য রয়েছে মুঘল সম্রাট আত্মরঙ্গ জেবের সময়ের কুরআন সহ মহাভারত ও রামায়ণের ঘরে রয়েছে বেশ কয়েকটা কাল পাথরের হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর প্রাকৃতি প্রসাদ চত্বরে রয়েছে গাছের সারি বিশাল মাঠ এবং প্রসাদের দুই পাশে রয়েছে দুইটি পুকুর। জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
গঠন
দারুন সুন্দর এই জমিদার প্রসাদ টি প্রায় ২১০ ফুটের মতো প্রশান্ত ও চারতলার সমান উঁচু। এর গঠন শৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হয়। যার প্রমাণ মিলে মধ্যভাগে বিশাল একটি গম্বুজ ও দুটি পাশে তার ছড়িয়ে যাওয়া গানগুলোর একটি মসজিদের থেকে। জমিদার বাড়ি যেদিক থেকে বাংলাদেশের অন্য সকল প্রসাদের থেকে আলাদা তা হলো এর সিঁড়িগুলো সর্বমোট ৩১টি সিরি আছে। যা প্রতিটাই ইতালীয় ঘরনার মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। এই বাড়িতে একটি গুপ্ত সিঁড়ি রয়েছে, এই সিঁড়িটি কোন একটি সুরঙ্গের সাথে যুক্ত যা সরাসরি ঘাঘট নদীর সাথে যুক্ত। এমন একটা জনশ্রুতি শোনা যায় তবে সিঁড়িটি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়িটির চারদিকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ শোভা ফুলের বাগান, উত্তর ও দক্ষিণ অংশে কামিনী, মেহগনি, কাঁঠাল ও আমবাগান বাড়িটির দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলায় রয়েছে রাজা গোলাপের ব্যবহৃত নানা জিনিস চারতলা বিশিষ্ট এই জমিদার বাড়িটি। ভেতরে রয়েছে অসংখ্য কক্ষ গোসলখানা ও অতিথি স্বয়ং শালা এই বাড়িটি লাল ইট সেতো পাথর ও চুনাপাথর ধারা নির্মিত বিদায় দেখতে অতি চমৎকার। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে ভিড় জমায়।
তাজহাট জমিদার বাড়ি খোলার দিনগুলো
গ্রীষ্মকাল
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর
সকাল ১০ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত
দুপুর ১টা থেকে ১ঃ৩০মিনিট বিরতি
শীতকাল
অক্টোবর থেকে মার্চ
সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা
দুপুর ১ থেকে ১ঃ৩০ মিনিট বিরতি
তাজ হাট জমিদার বাড়ির বন্ধের দিন
রবিবার পূর্ণ দিবস ও সোমবার অর্থ দিবস সহ সরকারি ছুটির দিনে এই বাড়িটি বন্ধ থাকে।
টিকেট মূল্য
জাদুঘরের গেটের পাশে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। জন প্রতি টিকিট ২০ টাকা। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু কিশোরদের জন্য প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে .৫টাকা এবং পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্য টিকেটের দরকার পড়ে না। সার্কভুক্ত বিদেশী দর্শণার্থীর জন্য টিকেট মূল্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা। প্রসাদ চত্বরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে গাড়ির জন্যও নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে
কিভাবে যাবেন
ঢাকা মহাখালী বাস টার্মিনাল ও গাবতলী কল্যাণপুর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন বাস রংপুরের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই বাসগুলো সাভার হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে রংপুর যাতায়াত করে। এই বাসগুলোর ভাড়া ৫৫০ থেকে ৯০০ টাকা। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের বাসে উঠলে রংপুর জাদুঘরের সামনে নামা যায়। তাছাড়া রংপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে জাদুঘরে গেট পর্যন্ত ভাড়া করে যাওয়া যায়। কিছু বাসের নাম দেওয়া হলোঃ
মিম পরিবহনঃ গাবতলী – ০১৯১১০১৩৬৯৪ , ০১৭৩৪৪২২৯৭১
টিআর ট্রাভেলস – ০১১৯১৮৬৩৬৮৯, ০১১৯১৮৬৩৬৯১, ০১১৯৮৬৩৬৭৩
গ্রীন লাইন পরিবহন – ৮৮০২৯১১২২৮৭, ৯১৩৩১৪৫, ০১৭৩০০৬০০৬
এস আর ট্রাভেলসঃ কল্যাণপুর – ০১৭১১৩৯৪৮০১ , ৯০৩৩৭৯৩
আলহামরা ট্রাভেলসঃ গাবতলী – ৮৮০২৯০০৫৬১২, ০১৭২১৮০২০৩১
কুড়িগ্রাম পরিবহন – ০১৯২৪৪৬৯ ৪৩৭, ০১৯১৪৮৫৬৮২৬
রংপুর কোথায় থাকবেন
রংপুরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল মোটেই রয়েছে কিছু হোটেলের নাম দেওয়া হলঃ
হোটেল কাশপিয়া – ৮৮০৫২১৬১১১১, ৮৮০১৯৭৭২২৪২
পর্যটন মোটেল – ০৫২১৫৫৪০৫৫৫৪০৬
হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার – ৮৮০৫ ২১৬৫৯২
হোটেল তিলোত্তমা – ৮৮০৫২১৬৩৪৮২, ০১৭১৮৯৩৮৪২৪
দিপার্ক হোটেল – ৮৮০৫২১৬৫৯২০
আরো পড়ুনঃবাঘা মসজিদ
Leave a Reply