খান জাহান আলীর মাজার (khan jahan alir majar) খুলনা বিভাগে বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। এই খান জাহান আলীর কারনেই বাগেরহাট জেলা বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভ করেছেন। খানজাহান আলী ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারক, তিনি দক্ষিণবঙ্গে এসেছিলেন একজন ধর্ম প্রচারের জন্য। তিনি প্রথম বাংলায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন্। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা পাঠাগার নির্মাণ করে। বাগেরহাট জেলায় নির্মাণ করেন বিশ্বে পরিচিতি বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ এখানে রয়েছে তার পবিত্র মাজার শরীফ।
খান জাহান আলী সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
হযরত খানজাহান আলী রাঃ জন্ম ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার পিতার নাম আকবর খা এবং মাতার নাম আম্বিয়া বিবি। খান জাহান আলী অন্যান্য নামের মধ্য রয়েছে উলুক খান, খান-ই-আজম ইত্যাদি। তার প্রাথমিক শিক্ষা তার পিতার কাছে এবং কুরআন হাদিস ফিকহ শাস্ত্রের উপর জ্ঞান অর্জন করেন তার ওস্তাদ কামিল পীর শাহ নেয়ামত উল্লাহর কাছে। খান জাহান আলি ১৩৮৯ সালে ততকালীন সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সেনাপতি পদে উন্নতি হন। ১৪১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলার যশোরের অবস্থান নেন এবং বাংলার দক্ষিণ পশ্চিম অংশে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। হযরত খানজাহান আলী পরলোক গমন করেন ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে ২৫ অক্টোবর (মাজার শরীফের শিলালিপি অনুযায়ী 863 হিজরী ২৬ শে জিলহজ) ষাট গম্বুজ মসজিদের দরবার গৃহে এশার নামাজ রত অবস্থায় 90 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
খান জাহান আলিফ মাজার শরীফ
হযরত খানজাহান আলীর মৃত্যুর পর তাকে খাঞ্জলি দিঘির উত্তর পাড়ে সমাহিত করা হয়। সেখানে তার সমাধি সৌদ নির্মাণ করা হয় যা এখন খান জাহান আলীর মাজার শরীফ নামে পরিচিত। সমাধি সৌদের প্রাচীর ২৫ ফুট এবং উঁচু এবং ছাদে একটি বড় গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। সমাধি দের সৌদের ভিতর খানজাহান আলীর মাজার শরীফ অবস্থিত। সমাধি সৌদের স্থাপত্য শিল্পী কর্ম অনেকটা ষাট গম্বুজ মসজিদের সাথে মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে। এখানকার শিলা পিপিতে খান জাহান আলীর মৃত্যু ও দাফন তারিখ পবিত্র কুরআনের কয়েকটি সূরা তার আত্মার উপর শান্তি বর্ষিত হোক ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বহু লোক এখানে আসেন মাজার জিয়ারতের জন্য,আবার কারো কারোর মানত করা থাকে তা পুরো করার জন্য এখানে আসে্ন, কেউ কেউ আবার আসে এখানকার নিদর্শন গুলো উপভোগ করার জন্য। এছাড়াও প্রতিবছরের ২৫ শে অগ্রহায়ণ এখানে ওরস মেলার আয়োজন করা হয় উক্ত ওরশ মেলায় বহু লোক এখানে ভিড় জমায়।
খান জাহান আলীর দিঘী ও কুমির
খান জাহান আলীর পাহাড়ের ঠিক দক্ষিণ পাশে ২০০ বিঘা জায়গা জুড়ে খান জাহান আলীর দিঘী বা খাঞ্জেলি দিঘী অবস্থিত। এই দীঘিটি মূলত সুপেয় পানির অভাব পূরণের জন্য খনন করা হয়। এই দীঘির নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কারো মতে এই দীঘির নাম ঘোড়া দিঘি, কারণ খান জাহান আলি ঘোড়ার পিঠে চড়ে দিঘী খনন করা পরিদর্শন করতে বলে এর নাম হয় ঘোড়া দিঘী। আবার কারো মতে এখানে বৌদ্ধ ঠাকুরের মূর্তি পাওয়া যায় এর ফলে এর নাম ঠাকুর দিঘী। আবার কারো মতে হিন্দু ভক্তরা খান জাহান আলীকে ঠাকুর বলে ডাকতেন এর জন্য নাম হয় ঠাকুর দিঘী।
খান জাহান আলী এই দিঘিতে দুটি কুমির ছেড়ে ছিলেন যার নাম দেন কালাপাহাড় ও দোলা পাহাড়। পুরুষ কুমিরটিকে বলা হয় কালাপাহার। আর মহিলা কুমিরটিকে বলা হয় দলা পাহাড়। পুরাতন কালাপাহাড় কুমিরটি মারা গেলে পরে আরো চারটি মিঠা পানির কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। এসব কুমিরের খাবার দাবার হয় মানের দেয়া সদ্গার হাস মুরগি বিভিন্ন পশু পাখি, তবে বর্তমানে এখানকার খাদেমরা মানুষের দেয়া সদগার মালামাল লুটেপুটে খেয়ে ফেলে, ফলে কুমির গুলোর পর্যাপ্ত খাবার অভাব থেকে যায়।
কিভাবে যাবেন
খানজাহান আলীর মাজার বাগেরহাট জেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে অনেক বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে বাগেরহাট এর দূরত্ব প্রায় .১৭৫কিলোমিটার।
সাকুরা পরিবহন
- গাবতলী -০১৭১২৯৩৪৪৩০
- সায়দাবাদ – ১৭১৪০৪০২২১
- ভাড়া ৫৫০ টাকা
হানিফ পরিবহন
- গাবতলী – ০২৯০১২৯০২
- সায়দাবাদ – ০১৭১৩৪০২৬৭৩
- ভাড়া ৫৫০ টাকা
সোহাগ পরিবহন
- গাবতলী – ০১৭১৮৬৭৯৩০২
- ভাড়া ৫০০ টাকা
পর্যটন পরিবহন
- সায়দাবাদ – ০১৭১১১৩১০৭৮
- ভাড়া ৫০০ টাকা
কোথায় থাকবেন
বাগেরহাটে থাকার জন্য বড় ছোট অনেক হোটেল রয়েছে। বাগেরহাটে থাকার জন্য আপনি আপনার পছন্দমত হোটেলে থাকতে পারেন।
- হোটেল মোহনা, বাগেরহাট – ০১৭২২৮৫৮৩১০
- জারিফ হোটেল, খান জাহান আলী মো, বাগেরহাট – ০১৭৫৩৫৯৮৩০০
- সার্কিট হাউস, বাগেরহাট – ০১৭৩৩৬০২০৭
- হোটেল প্যারাভাইস ভিউ, বাগেরহাট – ০১৭১৭০৯৮১৫৪
কোথায় খাবেন
খাওয়ার জন্য বাগেরহাটে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
- ব্লাক চেরি, বাগেরহাট – ০১৭৬৭১৫৩৮২৮২
- ধানসিড়ি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, বাগেরহাট – ০১৭১১৫৭৫০৯৫
- ক্যাসেল আশাহারা, খানজাহান আলী রোড – ০১৭২৬৫৩৬৩৭৬
- রিভার ভিউ ফুড কোট, পৌর পার, বাগেরহাট – ০১৯৬৫৪৩৪৪৩২
- ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট, বাগেরহাট- ০১৭৪৭৬৬৯২৬৬
বাগেরহাট জেলার আরো দর্শনীয় স্থানসমূহ
- বাগেরহাট জাদুঘর
- ষাট গম্বুজ মসজিদ
- খাঞ্জেলি দিঘী
- নয় গম্বুজ মসজিদ
- জিন্দা পীর মসজিদ
- রন বিজয়পুর মসজিদ
- চুনা খোলা মসজিদ
- বাংলা বন্দর
- অযোধ্য মঠ \ কোদাল মঠ
- চন্দ্রমহল ইকোপার্ক
- সাবেকডাঙ্গা পুরকীর্তি
- সিংগইর মসজিদ
- দিদি বিবি বিগানি মসজিদ
আরও পড়ুন: ফয়েজ লেক
Leave a Reply