কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (Cox,sbazar Sea Beach)পৃথিবীর দীর্ঘতম একমাত্র সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে কক্সবাজার জেলায় যার অবস্থান। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট মায়াময়ি এই সমুদ্র সৈকত। বালুকাময় সৈকতটিতে রয়েছে ঝিনুকের সমরাহ, নেই কোন কাদার আস্তরণ। সময়ের ঘন্টার পরিবর্তনে সৈকতের রূপের মাধুর্য ধরা দেয়। সকালের সৌন্দর্য এক রকম, মধ্যাহ্নে অন্যরকম, আবার পড়ন্ত বিকেলে আরেকরকম। যে কোন ঋতুতে এখানে ঘুরতে আসা যায়। রূপের মাধুর্য সব সময় অটুট থাকে। তাই প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায় ।
১৬১৬ সালের আগে মুঘল শাসনের পূর্বে কক্সবাজার সহ চট্টগ্রামের একটি বৃহৎ অঞ্চল আরাকানদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কক্সবাজারের পূর্ব নাম ছিল পালংকি। কক্সবাজার নামটির উৎপত্তি হয়েছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নাম অনুসারে। হিরাম কক্স ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ওয়ারেন্ট হোস্টিং এর শাসনামলে হিরাম কক্স পালংকি মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। হীরাম কক্স নাম অনুসারে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটিই কালক্রমে কক্সবাজার নাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মুঘল সম্রাট সাহ সুজা আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে এখানেই ক্যাম্প স্থাপন করেন। কক্সবাজার থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে এবং পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সাল
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের চট্টগ্রামে বিভাগের কক্সবাজার জেলায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এর পূর্বে রয়েছে মায়ানমার এবং ভারত সীমান্ত, দক্ষিনে রয়েছে বিশাল বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব হচ্ছে ৪১৪ কিলোমিটার। সড়ক ও আকাশ উভয় পথে কক্সবাজার যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কক্সবাজার ।
কক্সবাজারের প্রধান দর্শনীয় স্থান হচ্ছে লাবনী পয়েন্ট(Laboni point) সি বিচ। এই সি বিচে যখন সাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে মনে হয় যেন প্রকৃতি তার আপন হাতে তুলে ধরেছে মনোরম দৃশ্য। এখানে রয়েছে ঝিনুকের তৈরি বাহারি জিনিসপত্র, এই জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক দোকানপাট।
সীমন্ত পথে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কেটগুলো। এই মার্কেট গুলো পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। কক্সবাজার থেকে বাসে করে কলাতলী সি বিচ রোডে নেমে রিকশা অথবা পায়ে হাঁটা পথে যেতে পারেন এই সি বিচে।
কক্সবাজারের আর একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ বান্ধব পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে হিমছড়ি(Himchori)। কক্সবাজার যাবেন অথচ হিমছড়ি যাবেন না সেটা কখনো হতে পারে না। কক্সবাজার থেকে 12 কিলোমিটার দক্ষিণে হিমছড়ির অবস্থান। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সমুদ্রের ছোঁয়া পর্যটকদের করে বিমোহিত। তাই অনেক পর্যটক ক্যামেরায় ধরে রাখে এসব দৃশ্য। এখানে রয়েছে শীতল পানির ঝরনা, রয়েছে মেরিন ড্রাইভ রোড যা পর্যটকরা মনের তৃপ্তি মিটিয়ে উপভোগ করতে পারে।
পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে অবলোকন করা যায় সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য। মনে হয়, যেন পাহাড়ে ওঠার সব কষ্ট দূর হয়েছে। এখানকার আকর্ষণীয় আর একটি হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি, বর্তমানে হিমছড়িতে বেশ কিছু পিকনিক স্পট ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, যা পর্যটকদের এখানে আসতে আগ্রহ যোগায়।
কক্সবাজারের আরেকটি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান হচ্ছে কলাতলী পয়েন্ট(Kolatoli point) বা কলাতলী বিচ। বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন বয়সের, নানা ধরনের মানুষ, বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার ঘুরতে আসলে এই কলাতলী বিচে ঘুরতে আসেন। অনেকেই সমুদ্রে নেমে গোসল করেন, কেউবা সাঁতার কাটেন, কেউবা আবার মনের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
এই কলাতলী পয়েন্টে রয়েছে ছোট বড় নানা ধরনের খাবারের দোকান। যার যে রকমের পছন্দ সে অনুযায়ী তৃপ্তি সহকারে খেতে পারেন।কক্সবাজারগামি সকল যানবাহনই কলাতলী পয়েন্ট হয়ে শহরের ভিতর প্রবেশ করে, তাই খুব সহজেই এই স্থানটি ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো সুগন্ধা পয়েন্ট(Sugondha point)। এখানে রয়েছে ভ্রমণ প্রিয় মানুষের জনপ্রিয় বার্মিজ মার্কেট, সেখানে পাওয়া যায় রং বে রঙ্গের জিনিসপত্র। অতীতে এখানে অনেকগুলি খাবারের দোকান ছিল, যেগুলোতে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই পাওয়া যেত। কিন্তু সরকার সেগুলোকে উচ্ছেদ করে দেয়। তবে ক্লান্ত মনকে জাগিয়ে তোলার জন্য সুগন্ধাে পয়েন্ট যাওয়া যেতে পারে। কলাতলী পয়েন্ট থেকে খানিকটা উত্তর দিকে এই সুগন্ধা পয়েন্ট অবস্থিত।
কক্সবাজার থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইনানী সমুদ্র সৈকত(Inani Sea Beach)। এই ইনানী সৈকতটি দেখতে অনেকটা সেন্টমার্টিন এর মত। এখানকার সাগর খানিকটা শান্ত প্রকৃতির, এখানে প্রচুর প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যায়। যার দরুন সৈকতে সৌন্দর্য অনেক বেশি ফুটে উঠেছে।
বিকেল বেলা এই সৈকতের সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে অনেক বেশি ধরা দেয়। সন্ধ্যার সময় সূর্যের ডুবে যাওয়া মলিন দৃশ্য অবলোকন করার মতো। কক্সবাজার থেকে ইনানী বিচে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হিমছড়ি পাহাড় ঝাউবনের শাড়ি ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আপনার অশান্ত মনকে শান্ত করবে এটা নিশ্চিত বলা যায়।
কক্সবাজারের দরিয়া নগর সমুদ্র সৈকত(Doriya Nagor Sea Beach) হচ্ছে ভ্রমণ প্রিয় মানুষের আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। যেখানে পাহাড় সমুদ্র আর সূর্যের আলতো ছোঁয়ার মিলন স্থল। প্রকৃতি যেন তার আপন হাতে সাজিয়ে রেখেছে এই স্থানটিকে। কলাতলী মোড় থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এই স্থানটি অবস্থিত। দরিয়া নগরে রয়েছে বেশ কিছু পাহাড়, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা রাস্তা, সমুদ্র আর পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য স্থানটিকে করেছে আকর্ষণীয়।
পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট আঁকাবাঁকা কিছু সুরঙ্গ। আবার কিছু ছোট ছোট ঝরনাও দেখা যায়, বর্তমানে দরিয়া নগর প্যারাসাইলিং এর জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে, কক্সবাজারের একমাত্র এখানেই প্যারা সেইলিং করার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য সড়ক রেল এবং আকাশ উভয়ের পথেই ব্যবহার করতে পারেন তবে যার যেরকম রুচি এবং অর্থের উপর নির্ভর করে।
ঢাকা থেকে অনেকগুলি পরিবহনই প্রতিদিন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, এস আলম পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, গ্রীন লাইন, সোহাগ পরিবহন ইত্যাদি। এই পরিবহন গুলির মধ্যে আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী কক্সবাজার যেতে পারেন। শ্রেণীর মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত হয়, প্রতি সিটের ভাড়া ১১০০ থেকে ২৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন যোগে যাওয়া যায় না। তবে ঢাকা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম যেতে হবে তারপর সেখান থেকে বাসে বা মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার যেতে হবে। ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, প্রভাতী, মহানগর, গোধূলি, তূর্ণা ও নিশিতা ইত্যাদি ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
বিমানে করে আকাশ পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমান, ইউ এস বাংলা, নভোএয়ার, ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। যদি কেউ অল্প সময়ের মধ্যে কক্সবাজার যেতে চান তাহলে অবশ্যই আকাশ পথ বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া জন প্রতি ৪৬০০ থেকে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কক্সবাজারে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। তবে এখানে থাকার জন্য অগ্রিম হোটেল রুম বুকিং দিয়ে রাখা উচিত।কারণ সিজনে অগ্রিম বুকিং না দিয়ে বিপদে পড়া লাগতে পারে।
বিলাস বহুল হোটেল গুলোতে খুব আরাম আয়েশে থাকা যায়। তবে বিলাস বহুল হোটেল গুলোর ভাড়া বেশি হয়ে থাকে। এগুলোর ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিলাস বহুল হোটেলের কিছু নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হলো যেমন:
সাইমন বিচ রিসোর্ট :
হোটেল দা বক্স টুডে :
লংবিচ হোটেল কক্সবাজার:
যাদের বাজেট একটু মধ্যম পর্যায়ে তারা নিম্নের হোটেল গুলোকে ফলো করতে পারেন। মাঝারি মানের হোটেলের রুমের ভাড়া ৩০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।মাঝারি মানের হোটেলের কিছু নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হলো যেমন:
হোটেল সি ক্রাউন :
হোটেল সি প্যালেস লিমিটেড :
সিগাল হোটেল:
কম বাজেটের হোটেল গুলোর ভাড়া মূলত ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পছন্দ অনুযায়ী দর করে নিতে হবে। কম বাজেটের হোটেলের কিছু নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হলো যেমন:
হোটেল আলিফা
হোটেল এনিয়া রেসিডেন্সিয়াল
হোটেল মিশুক
ড্রিম গেস্ট ইন
হোটেল সি কুইন
হোটেল কোয়ালিটি হোম
হোটেল নিশান গেস্ট হাউস
কক্সবাজারে সব ধরনের খাবার রেস্টুরেন্ট আছে, যার যে রকমের সাধ্যের মধ্যে সে সেই ধরনের রেস্টুরেন্ট এ খাবার খেতে পারেন। আবাসিক হোটেল গুলোর কাছাকাছি বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। এখানে উচ্চ মানসম্মত খাবারের রেস্টুরেন্ট ও পাওয়া যায়। আবার মধ্যম এবং কম দামের খাবার রেস্টুরেন্ট ও পাওয়া যায়। তবে খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই দাম জেনে নেওয়া ভালো। নিম্নে কিছু রেস্টুরেন্টে নাম উল্লেখ করা হলো যেমন:
জুাই রেস্টুরেন্ট এন্ড বক্স ভ্যাকেশন
বাসমতি রেস্টুরেন্ট এবং বিরিয়ানি হাউস
ঝাউ বাগান রেস্টুরেন্ট
এইসব রেস্টুরেন্টে মোটামুটি সাধ্যের মধ্য খাবার পাওয়া যায়।
বোটানিক্যাল গার্ডেন সবুজের আচ্ছাদন আর নির্মল বাতাসের শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসেবে পরিচিত । ময়মনসিংহ জেলার…
মালনি ছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম চা বাগান।…
সাগর কন্যা দ্বীপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত এই জেলা নাম ছিল দক্ষিণ…
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একটি প্রত্নতবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। যেটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ত্ত্ব সংগ্রহে…
প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক সবাই একটু কম বেশি চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের পাট এর খোঁজ…
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে…