আহসান আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil) নবাবদের স্মৃতি বিজরিত জাদুঘর পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিল এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে ঢাকার শত বছরের পুরনো ইতিহাস। ঢাকার পুরনো স্থা্পমমনার গুলোর মধ্য অন্যতম স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয় আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil) নবাবদের স্মৃতি বিজরিত জাদুঘর। নবাব পরিবারের বহু স্মৃতি বিজড়িত এই প্রাসাদ টিকে বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আহসান মঞ্জিলের পুরনো ইতিহাস (History of Ahsan Manzil)
আহসান মঞ্জিল হচ্ছে নবাবী পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস ও গৌরবময় বাংলার সমৃদ্ধশালা। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহ বর্তমানে আহসান মঞ্জিলের স্থানে রংমহল নামে একটি প্রমথ ভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ প্রমথ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের নিকট বিক্রয় করে দেন। ১৮৩০ সালে নবাব আব্দুল গনির পিতা খাজা আলিমুল্লাহ রংমহলটি ক্রয় করেন। ১৮৫৯ সালে নবাব আব্দুল গনি সেখানে প্রমথ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ 13 বছর লেগেছিল এই প্রসাদ নির্মাণ করতে। নবাব আব্দুল গনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসাল্লাহ নাম অনুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল।
আহসান মঞ্জিল এর বৈচিত্র্যময় বর্ণনা
এক সময় ঢাকা শহরের সবচেয়ে উঁচু গম্বুজ ছিল আহসান মঞ্জিল। এর ছাদের উপরে সুন্দর গম্বুজটি, দোতালা এই ভবনের বারান্দা ও মেঝে তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। প্রেশাদের ভিতরে রয়েছে খাবার ঘর, লাইব্রেরী, জানলাগর, দাঁড়াবার হল এবং ব্রিলিয়াট খেলার জায়গা। আর প্রসাদের দোতালায় রয়েছে অতিথিদের থাকার জায়গা, নাচ ঘর, গ্রান্থাগার এবং আরো কিছু বসবাসের কক্ষ। প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একতলা সমান উঁচু বাড়ি বারান্দা রয়েছে। দক্ষিণ দিকে দোতলার বারান্দা থেকে একটি,খোলা সিঁড়ি সামনের বাগান পর্যন্ত নেমে গেছে।
প্রসাদের ঠিক সামনেই রয়েছে ফুলের বাগান ও সবুজ মাঠ। ১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত এই প্রসাদ টি বাংলার একটি প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। এই প্রসাদে লর্ড কার্জনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব অতিথি হিসেবে এই প্রসাদে বেড়াতে এসেছিলেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে এবং বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নবাব পরিবারের উত্তর সুবিধা আহসান মঞ্জিল বিক্রয় করে দেয়ারই পরিকল্পনা করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনটির রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে। নিলামের সিদ্ধান্ত বাতিল করে এখানে, জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। অনেকবার সংস্করণ সুন্দর বর্ধন পরিমার্জনের পর .১৯৯২সালে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পরিদর্শনে জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল এর ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জাদুঘরের সংগ্রহশালা মোট ৪০৭৭ টি নিদর্শন। আহসান মঞ্জিলের ২৩ টি কক্ষে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা আছে ৯টি কক্ষ। সেই নবাবি আমলের মত করেই সাজানো রয়েছে প্রতিটি কক্ষ। সেই নবাবী আমলের কাছে আপনাকে নিয়ে যাবে। জাদুঘরের প্রদর্শনের জন্য আছে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, নবাবদের পরিচিতি ও বংশ তালিকা, নবাবদের ব্যবস্থারিত বড় বড় আয়না, বৃহৎ আকার লোহার সিন্দুক, কাঠের আলমারি, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কাজ ও সিনেমাটির থালাবাসন, হাতির মাথার কঙ্কাল, ঢাল ও তরবারি, নবাব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা, পিস্টিলের তৈরি টেবিল, সিংহাসন, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, হিন্দুস্থানী রু্ম, রাজকীয় অতিথিদের বেডরুম, নাচ ঘর, আরো আছে সমসাময়িক কালের বিখ্যাত ব্যক্তিদের পথিকৃতি ও নবাবদের বিভিন্ন সময়ের সমাজ সেবা মূলক নিদর্শন।
আহসান মঞ্জিল টিকিট মূল্য (Ahsan Manzil Ticket Price)
আহসান মঞ্জিল দেখতে হলে টিকিট লাগে। অফলাইন এবং অনলাইন এই দুইয়ের মাধ্যমে টিকিট পাওয়া যায়। বাংলাদেশী ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জনপ্রতি ২০ টাকা। বিদেশি নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা। সার্বভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা। প্রতিবন্ধীদের প্রবেশ করতে কোন ফি দিতে হয় না। আর ছাত্রছাত্রীরা আগে থেকে আবেদনের মাধ্যমে ফ্রিতে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর (Ashan Manzil Museum) দেখতে পারে।
আহসান মঞ্জিল বন্ধের দিন (Ahsan Manzil Of Day)
আহসান মঞ্জিল সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে এবং প্রতি বৃহস্পতিবার ও বন্ধ থাকে। এছাড়াও ঈদের আগের দিন এবং ঈদের দিন বন্ধ থাকে। ঈদের পরের দিন থেকে আবার যথারীতি খোলা থাকে।
আহসান মঞ্জিল কখন খোলা থাকে (Ahsan Manzil Open Time)
আহসান মঞ্জিল সরকারি ছুটির দিন এবং বৃহস্পতিবার দিনগুলো সারা বাকি দিনগুলো খোলা থাকে।
গ্রীষ্মকাল
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।
শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত।
সকাল ১০ঃ৩০ am থেকে ৫ঃ৩০ pm পর্যন্ত খোলা থাকে।
শুক্রবার ৩ঃ০০ pm থেকে ৭ঃ৩০ pm পর্যন্ত খোলা থাকে।
শীতকাল
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।
শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত।
সকাল ৯ঃ৩০ am থেকে ৪ঃ৩০ pm পর্যন্ত খোলা থাকে।
শুক্রবার ৩ঃ০০pm থেকে ৭ঃ৩০ pm পর্যন্ত খোলা থাকে।
আহসান মঞ্জিল অনলাইন টিকিট (Ahsan Manzil Online Ticket)
আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে হলে টিকিট লাগবে। আপনি অনলাইনে টিকিট কাটতে চাইলে প্রথমে লিংক এ প্রবেশ করতে হবে। তারপর টিকিট কিনতে হবে। তারপর বক্সের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন করলে আর রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন পরেনা।পরবর্তীতে ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে টিকিট কাটতে পারবেন।
- প্রথমে “Purchase Ticket” অপশনে ক্লিক করুন জাদুঘরে যাওয়ার তারিখ এবং টিকিটের সংখ্যা লিখুন এবং অ্যাড বাটনে ক্লিক করুন।
- এদের অধিক টিকিট ক্রয় করতে চাইলে “Add More Ticket” বাটনে ক্লিক করুন।
- এখন “Make Payment” বাটনে ক্লিক করে আপনার পেমেন্ট দিন ।
- এরপর “Print Ticket” অপশনে ক্লিক করে আপনার টিকিট প্রিন্ট করুন।
- টিকিটের প্রিন্ট কপি বা মোবাইলের ডাউনলোড কপি অথবা টিকিটের নাম্বার দিয়ে আহসান মঞ্জিল জাদুকর প্রবেশ করতে পারেন ।
আহসান মঞ্জিল লোকেশন (Ashan Manzil Location)
২/৩ ইসলামপুর রোড, ঢাকা বাংলাদেশ।
ফোন নাম্বারঃ ৮৮০২৭৩৯৩৮৬৬, ৮৮০২৭৩৯১১২২
আহসান মঞ্জিল কিভাবে যাবেন (How GoTo Ahsan Manzil)
আহসান মঞ্জিল যেতে হলে প্রথমে গুলিস্তান যেতে হবে। গুলিস্তান থেকে সিএনজি বা রিস্কা ভাড়া করে আহসান মঞ্জিল যাওয়া যায়। এছাড়াও গুলিস্তানের নর্থসাউথ রোড দিয়ে নয়াবাজার মোড় হয় বাবুবাজার ব্রিজের বাম পাশে নিজ দিয়ে গেলে আর একটা মোর পড়বে, এর বাম পাশে ইসলামপুর। এখানে এসে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই করলেই আহসান মঞ্জিল দেখিয়ে দিবে। এছাড়াও ঢাকা সদরঘাট গামী যেকোনো বাসে উঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট ভিক্টোরিয়া পার্কে নেমে পায়ে হেঁটে অথবা রিস্কায় করে এই প্রসাদে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকা।
পুরাতন ঢাকার দর্শনীয় স্থানসমূহ (Old Dhaka Tourist Place)
- রোজ গার্ডেন প্যালেস
- লালবাগের কেল্লা
- তারা মসজিদ
- রূপলাল হাউস
- আর্মেনিয়া চার্চ
- ঢাকেশ্বরী মন্দির
- হোসনি দালাল
- খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ
- বাহাদুর শাহ পার্ক ( ভিক্টরিয়া পার্ক)
- আজিমপুর দায়রা শরীফ
- সদরঘাট লঞ্চঘাট
- ছোট কাটরা
- বড় কাটরা
- গোল তালাব
- রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির
- বিউটি বোর্ডিং
আরও পড়ুনঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ
Leave a Reply